টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থেকে আশিক মিয়া নামের এক ব্যক্তি পাবনার চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া সীমান্তবর্তী রুহুল বিলে এসেছেন শীতের রাতে মাছ ধরার নেশায়। এই বিলে বাউৎ উৎসব হয়। এটা দেশের অনেক এলাকার মানুষ জানেন। শখ করে বাউৎ উৎসবে যোগ দিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে তিনি ভুলে গেছেন দূরের পথ থেকে শীতের রাতে এই বিলে আসার কথা।
খাল-বিলে পানি কমার পর স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে কথা বলে বাউৎ উৎসবের দিন তারিখ ঠিক করেন। এবার শনিবার দিন ধার্য করা হয়।
আজ ভোরের আলোর দেখা মেলাতেই রহুল বিলের কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে শিশু থেকে নানা বয়সী মানুষের বিচরণ। পলো, ধর্মজাল, চাক জাল ও ঠেলাজালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে সবাই নেমে পড়েছে অর্ধপানিতে। মাছ ধরার এই উৎসব যেন মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। কেউ ঠাণ্ডায় জুবুথুবু অবস্থা। আবার কেউ মাছ ধরতে পেরে আনন্দ উল্লাস করছেন। বাউৎ উৎসবের হাসি যেন সবার মুখেই।
কুয়াশায় কাছে না গেলে বিলের মধ্যে কি হচ্ছে সেটা বোঝা কঠিন। দুর্বাঘাস থেকে যখন শিশির বিন্দু ঝড়ে পড়ে, অন্যদিকে ভোরের আকাশে উঁকি দেয় সূর্য, ধীরে ধীরে পরিষ্কার আলোয় দেখা মেলে সহস্রাধিক মানুষের বাউৎ উৎসবের ঢল। প্রতিবছরই এই সময়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ ঐতিহ্যবাহী এই বাউৎ উৎসবে যোগ দিতে।
চাটমোহরের বামনগ্রামের আব্দুল আলীম মাছ পেয়েছেন তিনটি। ছোট বেলা থেকে এই বিলের বাউৎ উৎসব শুরু হলেই তিনি ছুটে আসতেন মাছ ধরতে। মাছ ধরতে এসে তিনি কখনো নিরাশ হননি। রুহুল বিলে নামলে তিনি মাছ না নিয়ে কখনো বাড়ি ফিরে যাননি। পলো দিয়ে তিনি ৬ কেজি গজার মাছ ধরেছেন। মাছ পেয়ে বড়ই খুশি মনে বারেবারে পলো চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবারে বাউৎ উৎসবে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে মোখলেছুর রহমান জানান, এটা প্রতিবছর একটি আনন্দ উৎসবের ব্যাপার। অথচ কিছু মানুষ অতিলোভে এই আনন্দটাকে মাটি করে দিতে বাউৎ উৎসবের আগেই গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন উপায়ে মাছ শিকার করে নেয়। ফলে এখন আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না।
নাটোরের মিজানুর, সিরাজগঞ্জের খালেক, পাবনার আব্দুল লতিফ, জহুরুল ইসলাম, সোহানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ভালো মন নিয়েই এসেছিলাম। বরাবরের মতো এবারও কিছু মাছ নিয়ে যাব। কিন্তু কপাল মন্দ। বেশ কয়েকঘণ্টা চেষ্টা করেও মাছের দেখা পাইনি। আসলে মাছ না থাকলে মাছ পাবো কি করে এমন দাবি নিয়ে তারা বলেন, “আগে ভাগেই মাছগুলো অসাধু মানুষগুলো মেরে নেওয়ায় আজ আমাদের নিরাশ হতে হচ্ছে।”
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, “দ্বৈত উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাই হলো রুহুল বিল। শুনেছি প্রতি বছরের এই সব সময়ে এই বিলে বাউৎ উৎসব হয়। হাজার হাজার মানুষ আসেন বাউৎ উৎসবে যোগ দিতে। এটি এ অঞ্চলের মানুষে অতীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে।”
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সঙ্গেই যুগোপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এই অতীত ঐতিহ্য যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।”
মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত এই অঞ্চলের নির্ধারিত সীমরেখায় কোনো মানুষ অসাধু প্রক্রিয়ায় যাতে মাছ ধরতে না পারেন সে বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরদারী রাখার তাগিদ দেন তিনি।