চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ফেনীর ফায়ার ফাইটার সালাউদ্দিন কাদের সবুজ (৩৭), ডিপোর শিফট ইনচার্জ শাহাদাত উল্লাহ মজুমদার (৩৮) ও নিখোঁজ কাভার্ডভ্যান চালক মোহাম্মদ ইয়াসিনের (২৮) বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
নিহত সালাউদ্দিন সবুজ ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের মাস্টার মো. ইউছুপের ছোট ছেলে। তার এক মেয়ে ও ছেলেসন্তান রয়েছে। শাহাদাত ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের আমিন উল্লাহ মজুমদারের ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোতে শিফট ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ গত ৩ জুন তিনি ছুটি শেষে কাজে যোগ দেন। মুহাম্মদ ইয়াসিনের ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোসাইপুর গ্রামের মো. খোকা মিয়ার ছেলে। ইয়াসিন ছিলেন তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে মেজ।
পরিবার ও স্বজনরা জানান, সর্বশেষ ঈদের ছুটিতে সালাউদ্দিন সবুজ বাড়িতে আসেন। রোববার (৫ জুন) রাত ৯টায় স্ত্রী মর্জিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে ডিপোতে উদ্ধারের কাজে যোগ দেন। বিস্ফোরণের পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রোববার দুপুরে স্বজনরা জানতে পারেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ রয়েছে। সোমবার (৬ জুন) গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
নিহত সবুজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের কর্মক্ষম ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা-মা।
ফায়ার ফাইটার সবুজ ২০১১ সালের নভেম্বরে সোনগাজী ফায়ার স্টেশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
অপরদিকে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার শাহাদাত মজুমদারের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন শাহাদাতের মা-বাবা। পরিবারের কর্মক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তারা। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ডিপোতে আসেন ও পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলা অবস্থায় বিস্ফোরণের পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ রাখা আছে খবর পেয়ে স্বজনরা লাশ এনে ওই দিন রাতেই দাফন সম্পন্ন করেন। নিহত শাহাদাত তিন বছর আগে একই এলাকায় বিয়ে করেন। তার আড়াই মাস বয়সের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার জানান, শাহাদাত খুব ভালো ছেলে ছিল। ফেনী সরকারি কলেজে স্নাতক পাস করেই চাকরিতে যোগ দেন।
এদিকে শনিবার (৪ জুন) রাত থেকে খোঁজ নেই স্পেক্ট্রা কোম্পানির কাভার্ড ভ্যান চালক মোহাম্মদ ইয়াসিনের। সোমবার ইয়াসিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা কোকিলা আক্তার ছেলের নাম করে ডুকরে কাঁদছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চার বোনও।
চাচাতো ভাই মোহাম্মদ নাহিদ জানান, ডিপোতে আগুন লাগর পর ইয়াসিন বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানান। কথা শেষ করে ফেইসবুক লাইভে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও দেখান। একপর্যায়ে বিস্ফোরণ ঘটলে তার লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।