মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ঝর্ণা চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ায় ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করার অভিযোগ পাওয়া যায় স্থানীয় মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে। ঝর্ণার পরিবার লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিলে মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করা হয়। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় নিজেদের ভুল বুঝতে পারে মসজিদ কমিটি।
ইউএনও বরাবর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঝর্ণা ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। নারীর অধিকার রক্ষায় তিনি বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষ তাকে সবসময় অন্য চোখে দেখত।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, “গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমাই। এরপর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশে গিয়ে আমি ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি- এমন কথা তারা প্রচার করতে থাকে। এতে করে আমি বিব্রত বোধ করছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ব্যাপক মানহানি হচ্ছে।”
ঝর্ণা চৌধুরী আরও বলেন, “স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশ বৈঠকে ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।”
ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, “ঝর্ণার বাবা আমার কাছে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরেই কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি। তারাও বলেছে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না।”
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের বাড়িতে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি যান। তারা পরিবাদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা এজন্য অনুতপ্ত।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়া বলেন, “ঝর্ণা আমেরিকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছে, তাই তার পরিবারকে সর্তক করা হয়েছে।”
মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া বলেন, “আমরা ইন্টারনেট ও ফেসবুক বুঝি না। এলাকার কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে এ কাজ করিয়েছে। এজন্য আমরা অনুতপ্ত। এই মুহূর্তে আমরা তাদের বাড়িতে আছি।