ফরিদপুরে হঠাৎ বন্যার প্রভাব পড়তে শুধু করেছে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফরিদপুরের চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
শনিবার (১৮ জুন) এ চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে। এতে জেলার পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খা ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে ঢুকছে এই পানি। এতে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
বিপদসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার মাসুদ সরদার বলেন, “৭-৮ দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, দুইদিন যাবৎ পদ্মার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি উঠে যাবে।”
একই ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন (৭০) বলেন, “দুদিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা যাচ্চে তাতে বয়্যে আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে যায়।”
ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, “দুইদিন ধরে আমার ইউনিয়নে হুঁ হুঁ করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুইদিনে প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। এই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বদামসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”
পার্শ্ববর্তী চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, “হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে বাদামের সঙ্গে সঙ্গে এ ইউনিয়নের পাট ও তিল ক্ষেত তলিয়ে যাবে।”
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ফরিদপুরে হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়ালখাঁর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, “ফরিদপুরের বিপদসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। তবে, এই মুহূর্তে ৭.৫২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিপদসীনার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-তিনদিনে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।”
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, “ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে, বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার ইউএনও-কে ৭ টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৫০ টনের অধিক ত্রাণ মজুদ আছে। আশা করছি বন্যা মোকাবিলায় তেমন কোনো সমস্যা হবে না।”