• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩০,

নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাবার বাড়িতে এসেও রক্ষা হল না গৃহবধূর


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১, ০৫:৪১ পিএম
নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাবার বাড়িতে এসেও রক্ষা হল না গৃহবধূর

যৌতুকের জন্য প্রায়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হতেন গৃহবধূ খালেদা আক্তার অমি। নির্যাতনের ভয়াবহতা সহ্য করতে না পেরে সম্প্রতি বাকশক্তিও হারান তিনি। প্রাণ বাঁচাতে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি নিয়ে আসে পরিবার। তাতেও রক্ষা হয়নি। নির্যাতনের প্রতিবাদে পরিবারের লোকজন মানববন্ধন করার সময়ই এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার এই গৃহবধূ।

রোববার (৫ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে বাবার বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের পূর্ব দরবারপুর সেকান্দার মৌলভী বাড়ীতে এই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অমির মুখ ও হাত পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখ। বর্তমানে তিনি রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনায় অমির পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনী। শ্বশুরবাড়ির লোকজনই এসিড নিক্ষেপ করেছে বলে থানায় মামলা করেছে অমির পরিবার।

গ্রেপ্তাররা হলেন- অমির স্বামীর ফুফাতো ভাই তারেক ও ভাগ্নে মিনার। এছাড়া ফরহাদ নামের আরেকজনের নামে বিরুদ্ধেও মামলায় এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তাদের তিনজনের বাড়িই ফুলগাজী উপজেলার নিলক্ষ্মী শ্রীপুর এলাকায়।

অমির বোন শারমিন আক্তার জানান, রোববার সকালে ফেনী শহরে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ ও ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এতে অংশ নিতে শহরে যায় অমির পরিবার। এ সময় অমি তার বাবার বাড়িতেই ছিল। মানববন্ধন চলাকালে বাড়ির জানালা দিয়ে অমিকে লক্ষ্য করে এসিড ছুড়ে মারে তারেক, মিনার ও ফরহাদ। এতে তার মুখ ও হাত ঝলসে যায়। পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন অমিকে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, অমির শরীরের ডান অংশ ও চোখ এসিডে ঝলসে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা আশংকামুক্ত হলেও ক্ষত সারাতে কসমেটিক সার্জারি প্রয়োজন। তাই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অমির পরিবারের পক্ষ থেকে তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে মাঠে নামে র‌্যাব, পুলিশ ও পিআইবি। পরে তারেক ও মিনারকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনীর পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী। তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

অমির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়ির আবুল হাসেমের ছেলে ফ্রান্স প্রবাসী আবদুল হালিম লিখনের সঙ্গে অমির বিয়ে হয়। অমির বাবা ইসমাইল হোসেন কাতার প্রবাসী। বিয়ের পর থেকেই অমিকে যৌতুকের জন্য নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

অমির পরিবার আরো অভিযোগ করে, গত ৭ আগস্ট রাতে অমিকে সাপে কামড়ায়। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বরং পরদিন বিকালে বিষ নামানোর অজুহাতে ওঝা দিয়ে তাকে ও তার চার বছরের মেয়ে নুরীয়াকে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে বাবার বাড়ির সদস্যরা। সেখানে আট দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৬ আগস্ট বাবার বাড়ি ফিরে আসে অমি। তবে নির্যাতনে তিনি বাকশক্তি হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।

এদিকে খবর পেয়ে ১৭ আগস্ট অমিকে বাবার বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু তার পরিবার এতে বাধা দেয়। এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাড়িঘরেও হামলা করে। এ ঘটনায় অমির মা বাদী হয়ে নয় জনের বিরুদ্ধে ফুলগাজী থানায় একটি মামলা করে। পরে সেই মামলায় অমির ননদ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী আবুল কাশেমকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
 

Link copied!