• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তিস্তার ভয়াল থাবায় মানুষ সর্বস্বান্ত


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০৮:৩৭ এএম
তিস্তার ভয়াল থাবায় মানুষ সর্বস্বান্ত

পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠেছে তিস্তার ভয়াল থাবায় ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন। আকস্মিক বন্যায় সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর বোবা কান্না যেন থামছে না।

সরেজমিন জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার এক দিনের তাণ্ডবে তছনছ হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলের জমিসহ অসংখ্য স্থাপনা। ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে সব ভেসে গেছে নদীর স্রোতে। ভেসে গেছে কৃষকের মাছের ঘের। ধান, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে, এই ভেবে দিশাহারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। পানি কমে গেলেও এখনো অনেক পরিবার ঘরে উঠতে পারেনি। 

এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হাঁসের খামার করা হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) এখন নির্বাক। আকস্মিক বন্যায় বাড়িঘরসহ ভেসে গেছে হাঁসের খামার। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন।

হঠাৎ বন্যায় ফ্লাট বাইপাস সড়কটি ভেঙে একই এলাকার বকতিয়ার হোসেনের (৬৭) ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। ঘর মেরামতের টাকাপয়সা হাতে না থাকায় এখনো সে পরিবার নিয়ে ভাঙা ঘরগুলোতেই অবস্থান করছেন।

স্কুলশিক্ষার্থী সঙ্গীতা আক্তার বলে, “হঠাৎ পানির স্রোত ঘরের মধ্যে ঢুকলে প্রাণ বাঁচাতে আব্বা-আম্মুসহ আমরা দ্রুত গাইড বানের রাস্তায় উঠেছি। আমার বই-খাতাসহ বাড়ির সবকিছু ভেসে গেছে।”

কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক আশা করে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। কিন্তু এক দিনের বন্যায় সব তছনছ হয়ে গেল। এখন দেনার টাকা শোধ করব কীভাবে? পরিবার নিয়েই-বা খাব কী?”

উপজেলার তিস্তাপারের সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরল ইসলাম বলেন, বন্যা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অকাল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তিস্তাপারের কৃষক ও সাধারণ মানুষ। আকস্মিক এ বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এখনো কিছু পরিবারের বাড়িঘর পানি নিচে রয়েছে।

এই আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ও কাকিনা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন।

এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে তিস্তাপারের ৩০টি গ্রাম এবং চর ও দ্বীপ চরের হাজার হাজার একর জমির আমন ধান, ভুট্টা, আলু ও বিভিন্ন জাতের শাকসবজি। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ।

জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার নদীতীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তিস্তার ঢল। ১৯অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাত ১০টার পর থেকে পরদিন ২০ অক্টোবর (বুধবার) বিকেল পর্যন্ত পানিতে এখানকার সাড়ে ৩০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনিপাড়া, সর্দারপাড়া; ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিমপাড়া, বড়বাড়ি; ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপাড়া, মুন্সিপাড়া, ক্লিনিক পাড়া; ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাতিপাড়া, কদুআমতলা এলাকায় বন্যায় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে কাকিনা-রংপুর সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো লালমনিরহাটের সঙ্গে রংপুর এবং তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়া নীলফামারী, জলঢাকা ও বড়খাতার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার সঙ্গে সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণসহায়তা বিতরণ কার্যক্রম চলছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!