শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাবকে বাদ দিতে জাতিসংঘে চিঠি দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে দু-তিনটি ছাড়া বাকিগুলো নামসর্বস্ব। এগুলোর নাম আমরা আগে শুনিনি, আপনারাও শুনেছেন কিনা আমার জানা নেই। বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী এমনটা দাবি করেন।
এর আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক ১২টি সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়ারকে চিঠি দেয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) মানবাধিবার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিকে এই চিঠি পাঠায় সংগঠনগুলো।
এই চিঠির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তারা এই চিঠি দিয়েছে গত বছরের ৮ নভেম্বর। দুই মাসের বেশি সময় পর এটি হঠাৎ মিডিয়ায় কেন নিয়ে এল? এটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।”
এছাড়া বিদেশে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে, তাদের অবৈধ অর্থ লবিস্ট ফার্মে লগ্নি করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির নয়াপল্টন অফিসের ঠিকানা দিয়ে তারা লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে।”
এদিকে লবিস্ট নিয়োগে বাংলাদেশ থেকে অর্থ কীভাবে গেল তা তদন্তের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “জনগণের ওপর বিএনপির কোনো আস্থা নেই। তাই তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের মধ্যে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ। একটি রাজনৈতিক দল দেশের বিরুদ্ধে যখন এ ধরনের ষড়যন্ত্র করে, তারা দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে, দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রকে হেয় করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করার তথ্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সংসদে বলার পর থেকে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।”
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তাদের নেতাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার জন্য এফবিআইয়ের এজেন্ট ভাড়া করেছিল। সেই এজেন্টকে পরে যুক্তরাষ্ট্রে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।”
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে আইন করা হচ্ছে সেটা জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে না- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এমন বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একটা আইন করার কথা বলেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পুরো বিষয়টি হচ্ছে রাজনৈতিক। টিআইবি কাজ করে দুর্নীতি নিয়ে, এটির সঙ্গে তো দুর্নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক ইস্যুতে বিবৃতি দিয়ে টিআইবি প্রমাণ করেছে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিবৃতি দিতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধপরাধীদের রক্ষায় নানাভাবে চেষ্টা করেছে। অথচ এসব সংগঠন যেসব দেশে বসে কাজ করে সেসব দেশসহ পৃথিবীর অন্য জায়গায় যখন এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় তখন কোনো বিবৃতি দেয় না। এসব সংগঠন ইতোমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। র্যাবকে জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে বাদ দেয়ার তাদের এই আহ্বান খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চিশতি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী শাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মনওয়ার রিয়াদ মুন্নাসহ নেতারা।