প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে পুরনো স্বরূপকাঠি উপজেলার কৌড়িখারা বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকাণ্ড ৬০ বছর পরেও তেমনটি জমে ওঠেনি। কর্তৃপক্ষ জানায় এ পর্যন্ত শিল্পনগরীর ১৬৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬৪টি প্লট। বরাদ্দকৃত প্লটের মাত্র ৮৩টিতে শিল্প কারখানা চালু রয়েছে, ৬টি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে আর ৭৫টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আর ৩টি প্লট সম্পূর্ণ খালি পড়ে আছে। শিল্প কারখানা গড়ার জন্য কোন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসছে না।
বিসিক কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেলেও বাস্তব চিত্র অন্যরকম। কাগজপত্রে চালু থাকলেও বেশকিছু শিল্প কারখানায় তালা ঝুলছে এবং কিছু কিছু প্লটে গাছগাছালি লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা। আর শূন্য প্লট গুলোতে গরু-ছাগল চড়ানো হচ্ছে। তবে ইদানিং দু-একটি কারখানা নতুনভাবে গড়ে উঠেছে এবং চালু রয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি এলাকাটি কুটির শিল্প, নার্সারি ব্যবসা, পেয়ারা ও আমরা উৎপাদন এবং কাঠ ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ। সন্ধ্যা নদীর পূর্বপাড়ে স্বরূপকাঠি উপজেলা সদর আর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত সোহাগদল ও সুটিয়াকাঠী ইউনিয়ন দুটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। সুটিয়াকাঠির কৌরিখাড়া গ্রামে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৪.৭৪ একর জমিতে ৫৫.৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকে প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প-কারখানা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাঠসহ অন্যান্য ব্যবসায় মূলধন বিনিয়োগ করায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না।
কৌরিখাড়া বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. শাহীদুর রহমান এবং বিসিক পিরোজপুর জেলার উপব্যবস্থাপক মিল্টন চন্দ্র বৈরাগী ও অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শিল্প-কারখানা গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের অভাব, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদেশ থেকে আসা কম মূল্যের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা প্রভৃতি নানা কারণে এখানে শিল্পনগরী জমে উঠতে পারছে না। অথচ এখানে উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে পুরো শিল্পনগরীতে প্লাস্টিক রশি তৈরির ছয়টি কারখানার মধ্যে চারটি, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি দড়ি ও পাপোস কারখানার তিনটির মধ্যে দুটি, লজেন্স কারখানা একটি, ছ-মিল আটটির মধ্যে ছয়টি, আটা ও মসলার মিল একটি, ফার্নিচার কারখানা পাঁচটি, ববিন একটি, আয়ুর্বেদ ঔষধ ও সিরাপ তৈরির কারখানা পাঁচটির মধ্যে দুটি, বাঁশ ও বেতের কারখানা দুটি, স্যান্ডেল তৈরির কারখানা একটি, সেনেটারি রিং-স্লাব তৈরির কারখানা একটি, ক্যারাম বোর্ড তৈরির একটি, ক্রিকেট ব্যাট তৈরির একটি ও দুটি উন্নত মানের বেকারি ফ্যাক্টরি চালু আছে।
কর্তৃপক্ষের তথ্য থেকে জানা গেছে, গার্মেন্টস, বরফ কলসহ অন্য অনেক শিল্প-কারখানা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চালু থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলোতে তালা ঝুলছে। বরাদ্দকৃত প্লট গ্রহীতার এখানে কারখানা না গড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। আবার কেউ কেউ আবাসিক এলাকা তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছেন।
শিল্প নগরীতে প্রবেশ মুখের খালটি কাঠের স্তুপ দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। খালে গাছ রাখার ফলে শিল্পনগরীর কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি চালু কারখানার মালিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ছ-মিল, ফার্নিচার, প্লাস্টিক রশি ও নারকেলের ছোবড়া নির্ভর কারখানাগুলো মোটামুটি লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকেই স্বরূপকাঠির এসব পণ্যের ভালো বাজার রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ও এসব পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। করোনাকালীন এসব পণ্য বিদেশে প্রেরণ করা যাচ্ছে না বিধায় সংকট চলছে। বাকি চালু শিল্পকারখানাগুলো নগদ মূলধনের সংকটে ভুগছে।
এই শিল্পনগরীর মধ্যে নানা সমস্যায় পানির টাওয়ার দীর্ঘদিন পর্যন্ত অকেজো হয়ে পড়েছিল। বিসিক ম্যানেজার জানান, পানির টাওয়ার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। নগরীর মধ্যেই ৫০০ ফুট রাস্তা নির্মাণের কাজ ও ৯৭৫ ফুট ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ওই শিল্প নগরীর প্রধান সমস্যা জেটি নির্মাণ করা। গত বছর ২৫ ডিসেম্বর বিসিকের উপপ্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী জেটি নির্মাণের জন্য বিসিক শিল্পনগরী পরিদর্শন করেন। আশা করা যাচ্ছে জেটি নির্মাণের ব্যাপারে অচিরেই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হবে। জেটি নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং অচিরেই জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।