গাজীপুরের শ্রীপুর থানার বেড়াইদেরচালা এলাকার আলোচিত ছাত্রনেতা সৈয়দ মাছুম আহম্মেদ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তার বাড়ির জমিজমার কাগজ চুরির সময় ধরে ফেলায় এলোপাতাড়ি আঘাতে মারা যান মাছুম।
পিবিআইয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বেড়াইদেরচালা গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহ ক্বারীর সন্তান আবুল কালাম (৪১), শামসুদ্দিনের সন্তান শফিকুল ইসলাম (৩২), আব্দুল জলিলের সন্তান নাজির হোসেন জয় (২৯) ও আব্দুর রশীদের সন্তান সাইফুল ইসলাম (৪০)।
গত ২৮ জুলাই বিকেল থেকে ৩০ জুলাই সকাল পর্যন্ত শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব-১ তাদের গ্রেপ্তার করে।
রোমহর্ষ এই হত্যা মামলার আসামিরা সৈয়দ মাছুম আহম্মেদের ঘরে ঢুকে প্রতিটি ঘরের বাইরে দিয়ে সিটকানি আটকিয়ে ঘরের তালা ভেঙে তারা ঘরে প্রবেশ করে। তখন মাছুম তাদের দেখে ফেলায় তার চিৎকারে আশপাশ থেকে লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এলাকার লোকজন মাছুমের বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলে এবং তাকে অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স অব ইন্সটিটিউটে ভর্তি করে। মাছুমের চাচা মোফাজ্জল হোসেন শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতানামা আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে সৈয়দ মাছুম আহম্মেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই সকালে মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
শ্রীপুর থানার এসআই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মামলাটি তদন্ত করেন। ঘটনার পরপরই পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং শ্রীপুর থানায় তদন্তাধীন থাকাকালে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটি অধিগ্রহণ করে।
পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কাওছার উদ্দিন গত ২৭ জুলাই থেকে মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।
এই মামলা সংক্রান্তে আসামি কালামকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঈদুল আজহার দিন দিবাগত রাত অর্থাৎ ২২ জুলাই রাত দেড়টার সময় কালাম তার সহযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় একটি কারখানায় বৈদ্যুতিক তার চুরি করতে যায়, কিন্তু নিপাপত্তা প্রহরী জেগে থাকায় তারা সে রাতে তার চুরি করতে পারেননি। পরে স্থানীয় মারুফ ও জহিরদের সঙ্গে জমিজমাসংক্রান্তে বিরোধের কারণে মারুফ ও জহিরদের নির্দেশে কালাম এবং তার সহযোগীরা ঈদের দিন রাতে ছাত্রলীগ নেতা মাছুম আহম্মেদ বাসায় না থাকার সুযোগে তার রুমের তালা ভেঙে তাদের জমির মূল কাগজপত্র চুরির জন্য পরিকল্পনা করে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার আসামি কালাম তার সহযোগী আসামিদের নিয়ে রাত অনুমান আড়াইটার দিকে মাছুমের বাড়িতে প্রবেশ করে। মাছুম কক্ষে না থাকার সুযোগে আসামিরা তার কক্ষের তালা ভেঙে জমির কাগজপত্র চুরি করার উদ্দেশ্যে কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করে। রাত তিনটার সময় তার বাসায় এসে কক্ষের সামনে গেলে ভেতর থেকে একজন আসামি দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে মাছুম তাকে ধরে ফেলে। তখন অন্যান্য আসামিরা ইট দিয়ে ভিকটিমের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। ভিকটিম চোর চোর বলে চিৎকার দিলে আসামিরা ভয়ে সবাই দৌড়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলে আসামিরা হত্যায় ব্যবহৃত ৩ জোড়া সেন্ডেল ও ২টি ছাতা ফেলে রেখে যায়। গ্রেপ্তার আসামি কালাম ও তার সহযোগী পুলিশ হেফাজতে থাকা অন্য আসামিরা প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত এবং জব্দকৃত সেন্ডেল ও ছাতা শনাক্ত করে। এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে অন্য আসামিরা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে স্বীকার করেছেন।
এই বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ঘটনার রাত তিনটার সময় মাছুম তার বাড়িতে ছিল না। এই সুযোগে তার পরিবারের সঙ্গে বিবদমান জমির মূল কাগজপত্র চুরি করার উদ্দেশ্যে আসামিরা তার ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করে। ভিকটিম মাছুম বাইরে থেকে এসে তার কক্ষে প্রবেশ করার সময় আগে থেকেই অবস্থানরত আসামিরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় ভিকটিম মাছুম একজন আসামিকে ধরে ফেলে। এরপরই এলোপাতাড়ি আঘাতে মাছুম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।