উত্তরায় গার্ডার পড়ে নিহত মেহেরপুরের নূর ইসলাম রুবেল ওরফে আযুব হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এমন দুর্ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে।
রাজধানীর উত্তরায় সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকালে নির্মাণাধীন বিআরটিএর প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারের পাঁচজন নিহত হন। এর মধ্যে নূর ইসলাম রুবেল ওরফে আযুব হোসেন হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মৃত তারা চাঁদ মণ্ডলের ছেলে। রুবেলের মৃত্যুর খবর তার নিজ গ্রামে এসে পৌঁছালে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠে।
রুবেলের মরদেহটি একনজর দেখার জন্য আশপাশের গ্রাম থেকে স্বজনরা ভিড় জমায় তার পৈতৃক ভিটায়। কিন্তু নিজ গ্রামে লাশ নিয়ে আসা নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংশয়। রাজধানী ঢাকায় রুবেলকে স্বামী হিসেবে দাবি করেন কয়েকজন। তার একাধিক স্ত্রী রয়েছে বলেও জানা যায়। তবে নিহতদের মধ্যে রুবেলের মরদেহ গ্রহণ নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তার সমাধান হওয়ার পর শাহিদা ও রেহানা নামের দুই স্ত্রীর দায়িত্বে রুবেলের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে জানাজার পর মঙ্গলবার রাতে তার লাশ এসে পৌঁছায় নিজ পৈতৃক ভিটায়।
জীবিকার তাড়নায় ২২ বছর আগে মেহেরপুর ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান নূর ইসলাম রুবেল ওরফে আযুব হোসেন। সেখানে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে চাকরি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে শুরু করেন ব্যবসা। তার নাম রুবেল হলেও এলাকায় তাকে আয়ুব হোসেন নামে চিনেন তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার হেমায়েতপুরে বিয়ে করায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্যবসার কাজের জন্য ঢাকার খিলক্ষেতে একটি বাসাতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন তিনি।
শনিবার (১৩ আগস্ট) একমাত্র ছেলে হৃদয়ের বিয়ে দেন জামালপুরে। সোমবার ছিল বৌভাত। অনুষ্ঠান শেষে ছেলে, ছেলের বউ ও তার পরিবারের লোকজনকে নিজের গাড়ি চালিয়ে রাখতে যাচ্ছিলেন জামালপুরে। এর মধ্যে উত্তরায় ঘটে মর্মান্তিক দুঘটনা। তিনিসহ প্রাণ হারান পাঁচজন।
এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
রুবেলের বড় ভাই সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মহাসিন আলী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে রুবেল ঢাকায় যায়। তারপর থেকে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কখনো পোশাক কারখানায় চাকরি করেছে আবার কখনো গার্মেন্টসের সঙ্গে ব্যবসা করেছে। মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে দু-একদিন করে বেড়িয়ে যেত। দিন পনের আগেও সে গ্রামে এসে ঘুরে গেছে।
তার আরেক ভাই আসলাম হোসেন জানান, এই ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। আনন্দের মধ্যে লাশ হয়ে ফিরল ভাই। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি ও তার পরিবার।
প্রতিবেশী শাহ আলম জানান, খুব ভালো মানুষ ছিল আয়ুব হোসেন। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মরত শ্রমিকদের অবহেলার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর তাদের ভুলের মাসুলে ঝরে গেল বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তারা।