“কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি/ প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি জুগিয়েছে, বিজয় লক্ষ্মী নারী”—” নারীদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এই পঙক্তিটি তুলে ধরেন বক্তরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন পিস ক্যাফের প্রত্যয়ী প্রজেক্ট। অনলাইনে আয়োজিত এই কর্মশালায় আদিবাসীদের সুস্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের কথাও তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হয়ে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন পেপার ক্র্যানস অব ভেনাসের অর্থ ব্যবস্থাপক রুছাফা হোসাইন।
রুছাফা হোসাইন বলেন, “একজন নারী গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবারের অভাব, বিশ্রাম, পরিমিত ঘুমসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। এ জন্য নারীকে সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে ও পরে নানা জটিলতার মুখোমুকি হতে হয়। এমনকি অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার কারণে অনেকের মৃত্যুও হয়।”
এ সময় আলোচকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৮৩০ জন নারী অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার কারণে প্রাণ হারায়। যার বেশির ভাগই ঘটে উন্নত দেশগুলোতে। এছাড়া প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়।
নারীদের ঋতুচক্রকালীন স্বাস্থ্য ও সচেতনতা তুলে ধরে পেপার ক্র্যানস অব ভেনাসের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হালিমা হাসিন বলেন, “ঋতুচক্র চলার সময় নারীদের সুষম খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা,পরিমিত পানি পান করা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন।”
বাল্যবিবাহ ও নারী -পুরুষের সমতার বিষয়ে তুলে ধরে পেপার ক্র্যানস অফ ভেনাসের টিম ম্যানেজার মাশাইক হাসান বলেন, “পৃথিবীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান অপ্রতুল ও অনন্য। বিশ্বের সভ্যতার উন্নত শিখরে নারীদের পদচারণা প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক জায়গায় বাল্যবিবাহের রীতি প্রচলিত। এতে একটি কিশোরীর শায়িত স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। বাল্যবিবাহ একটি কুসংস্কার। সমাজ থেকে এই কুসংস্কার দূরীকরণে সবাইকে সম্মুখে এগিয়ে আসতে হবে। নারীকে তার যথোপযুক্ত আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে, তবেই এ সমাজ তথা দেশ সভ্যতা উন্নত শিখরে পৌঁছাবে।”
কর্মশালায় উইমেন পিস ক্যাফের প্রত্যয়ী প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর প্রবীণ ত্রিপুরা ও সানজিদা ইসলাম ইরাসহ অনেকে যুক্ত ছিলেন।