উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেই সঙ্গে গরমের প্রভাবে বেড়েই চলছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। প্রতিদিন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন আক্রান্তরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়াসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে ১২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে শয্যা-সংকট থাকায় ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বড় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীসহ স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে এমনিই চিত্র দেখা গেছে।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালটিতে ২৯৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ২৪ জন রোগী, আর বেডের সংখ্যা ১২টি। এদিকে শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ২৮টি, আর ভর্তি আছে ৬৯ জন। যা শিশু ওয়ার্ডের বেডের দ্বিগুণ রোগী ভর্তি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই গরমে এতো বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।
শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রিয়াংকা রানী বলেন, “গরমের কারণে হসপিটালের শিশু ওয়ার্ডে তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের আবদুল্লাহ নামের এক শিশুর মা বলেন, “আমার বাচ্চার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় চারদিন থেকে হাসপাতালে আছি। গরমে থাকা যাচ্ছে না, খুব গরম পড়ছে। আবার বার বার বিদ্যুৎ যায় বাচ্চাকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।”
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আল-আমিন মাসুদ বলেন, “আবহাওয়া জনিত কারণে এখানে অনেক গরম পড়েছে। এ গরমের কারণে কিছু অসুখ বেড়ে গেছে। যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া। এ সময় আমি বাচ্চাদের বাবা মাকে সর্তক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। বিশেষ করে তারা যেন বাহিরের কোনো খাবার বাচ্চাদের না খাওয়ান। এই গরমে বাচ্চাদের শরীর ঘেমে গেলে মুছে দিতে হবে। খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে যদি কখনো কোনো সমস্যা হয় সর্দি কাশি হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসবে।”
সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, “বন্যার পানি নেমে যাওয়া ও তীব্র গরমে বেশ কিছু অসুখের প্রার্দুরভাব আমরা লক্ষ্য করছি। জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা চলমান রয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৮৫টি মোবাইল মেডিকেল ডিম কাজ করছে। এবং বিভিন্ন রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করছে। যেসব রোগীরা বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা জেলা সদর হাসপাতালে রের্ফাড করছি। আমরা আসা করছি পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”