• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে কমেছে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ১১:৪৪ এএম
কুড়িগ্রামে কমেছে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা

শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও দৃষ্টি নন্দন কাশবন যেন জানান দিচ্ছে দুর্গা দেবীর আগমনী বার্তার। বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী সময়টা চলছে শরৎকাল। শরৎকাল এলেই চারদিকে সাদা মেঘের মাঝে কাশফুল দিয়ে ছড়িয়ে যায় চারপাশ। চারদিকে তখন শোনা যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুজোর সরগম। শারদীয় দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব।

এই প্রাণের উৎসবের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছেন এই সম্প্রদায়ের প্রতিমা শিল্পীরা, যাদের প্রতিমা কারিগর কিংবা মালাকরও বলা হয়। কুড়িগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এসব প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা বাড়লেও প্রতিমার সঠিক দাম না পাওয়া আর পূজার সংখ্যা কমানোর প্রভাবে খুশি নন কারিগররা।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের বেশ কয়েকটি পাল পাড়া আর কুমোর পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এবারের দুর্গোৎসবকে ঘিরে প্রতিমা কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়। একেক জন কারিগর ৮ থেকে ১২টি করে প্রতিমার অর্ডার নিয়েছেন। যা বিগত বছরগুলোতে ছিলো ১৬-২০টি করে। জেলার বাইরে থেকে প্রতিমার অর্ডার পেলেও গত দুই বছর থেকে করোনার প্রভাবে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে লাভ কম হলেও উৎসব কমিটির পছন্দের চাহিদা মতো তারা প্রতিমা গড়ছেন আপন হাতের ছোঁয়ায়। পাশাপাশি পুজোর মাটির সরঞ্জাম হাড়ি, কলস, ঘট, সরা, প্রদীপ ইত্যাদিও গড়ছেন কারিগররা। জেলার কাঁঠালবাড়ি, দাশেরহাট, বৈদ্যের বাজার, ঘোগাদহ, পালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে এসব মাটির সরঞ্জাম ও দুর্গা প্রতিমা।

রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্যের-বাজার এলাকার প্রতিমা কারিগর তপন চন্দ্র মালাকার বলেন, “বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। প্রতি বছর দুর্গা উৎসব এলে কয়টা টাকার মুখ দেখি। এ বছর ৯টি প্রতিমা তৈরি করছি। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারি দিতে স্ত্রী-সন্তান ও দুই-তিন জন স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।”

সদরের কাঁঠালবাড়ির প্রতিমা কারিগর শ্রী কালিকান্ত পাল বলেন, “দুই বছর করোনার কারণে জেলার বাইরের পুজোর প্রতিমার তেমন অর্ডার নিতে পারি নি। এ বছর প্রতিমার অর্ডার বেশি আশা করেছিলাম। কিন্তু এ বছর জেলায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমায় অর্ডার কম পেয়েছি।”

একই এলাকার আরেক প্রতিমা কারিগর শ্রী সুশীল পাল বলেন, “প্রতিমার সরঞ্জামের দাম গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেড়েছে। সেই তুলনায় প্রতিমার দাম তেমন পাচ্ছি না আমরা।”

প্রতিমার লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, ময়ূর, পেঁচা সবকিছু তৈরি শেষ হয়েছে। মূল প্রতিমা দেবী দুর্গার কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এসব প্রতিমায় এখন মাটির প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। রং তুলির আঁচর পড়বে ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার পর। ৫ দিনের এই শারদ উৎসব শুরু হবে ১ অক্টোবর থেকে।

কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এবার ৫১৪টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয়া দুর্গোৎসব। যা গত বছরের চেয়ে ৬০টি কম। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৭২টি, উলিপুরে ১১৮টি, চিলমারীতে ৩২টি, রৌমারীতে ৮টি, রাজিবপুরে ১টি, নাগেশ্বরীতে ৯০টি, ভূরুঙ্গামারীতে ১৮টি, ফুলবাড়িতে ৬৩টি ও রাজারহাটে ১১২টি।

কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী রবি বোস বলেন, “গত বছর কুড়িগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় দুর্গা পূজার সময় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সেই আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় নির্দেশে এবার গ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোর পূজা অনুষ্ঠিত হবে না।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!