হাত ছাড়াই ভাঙেন ইট-পাথর


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ০৮:১৪ পিএম
হাত ছাড়াই ভাঙেন ইট-পাথর

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যতই থাকুক না কেন, যদি থাকে মনের প্রবল ইচ্ছে তবে তাকে দমানোটা বড় কঠিন। নিজ সাধনা ও প্রবল আত্মবিশ্বাস মানুষকে সফলতা এনে দেয়।

এমনই একজন মানুষ মো. শামীম হোসেন (৩২)। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক হাতের একটি পাঞ্জা নেই তার। তবুও এই অপূর্ণতাকে মহান সৃষ্টিকর্তা এক ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছেন। মানুষ যা কল্পনাও করতে পারে না এমনই এক শক্তি রয়েছে তার কব্জিতে। সে ভাঙতে পারে কঠিন কঠিন জিনিসপত্র। ইট -সিমেন্টের তৈরি যে কোনো কিছু। এমনকি পাথরও! যা অনেকটা বিস্ময়কর।

নিজ চোখে না দেখলে অনেকের কাছে অসত্য কিংবা গল্পের মতো মনে হবে। তবে মানুষের কাছে গল্প, সত্য আর বিস্ময় মনে হলেও এটাই এখন শামীমের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। অনেকেই তার এই কাজ দেখে আনন্দ পায়। বিস্মিত হয়। মানুষকে বিস্মিত-আনন্দ দিয়ে বিনিময়ে খুশি হয়ে যে যা দেয় তাই দিয়েই চলে শামীমের পেট।

শামীম হোসেনের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকশায়। বাবার নাম মো. আব্দুল্লাহ। তবে তার জীবন সংসার আর দিন রাত কাটে ট্রেনে কিংবা স্টেশনে। স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা অথবা ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের একটু শারীরিক কসরত, আনন্দ-বিনোদনের খুশির পয়সায় চলে তার জীবন।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মেলে শামীমের। একহাতে কালো ব্যাগ। আরেক হাতে জন্মগতভাবে পাঞ্জা নেই। এসময় রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের সামনে হঠাৎ সে ইট-সিমেন্টের পিলার ভেঙে তার শক্তি ও শারিরীক কসরত দেখায়। একে একে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে সে রেললাইনের ওপর পাথর রেখে পাঞ্জাহীন হাত দিয়ে তা ভেঙে দেখায়।

সেখানে উপস্থিত থাকা বোয়ালমারীর ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা আমীর চারু জানান, লোকজনের জটলা দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি এক যুবক রেললাইনের ওপর পাথর রেখে হাত দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছে। আমি প্রথম মনে করেছি হয়তো মাথা খারাপ-পাগল হবে। পরে দেখলাম আস্ত পাথর হাত দিয়ে ভেঙে ফেলল।

রেলস্টেশন সংলগ্ন বাসিন্দা ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান জানান, দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে এ দৃশ্য দেখে বেশ বিস্মিত হয়েছি। নিজে না দেখলে অন্যর কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারতাম না।

শামীম হোসেন বলেন, “আমি প্রায় দশ বছর ধরে এ কাজে আছি। বিয়েও করেছি ১০-১২ বছর আগে। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মা-বাবা আছে। আমার জন্মগতভাবে হাতের পাঞ্জা নেই। তাই এ দেখে মানুষ কোনো কাজকর্মে নেয় না। কি আর করবো না খেয়ে তো আর মরতে পারি না। আবার ভিক্ষা করাও সম্ভব নয়। যতো শক্ত কিছু হোক এ হাত দিয়ে আঘাত করলেও ব্যথা পাই না। এটা আমার দশ বছরের শিক্ষার ফল। এটা আমার রোজগারের পথ। এ থেকে যা পাই তা দিয়েই নিজের পেট ও সংসার চলে।”
 

Link copied!