বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি

উৎপাদন বন্ধ রেখে চুক্তি নবায়নে ব্যস্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান


দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ১১:৪৭ এএম
উৎপাদন বন্ধ রেখে চুক্তি নবায়নে ব্যস্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্প্রতি স্থানীয় বাঙালি শ্রমিকদের খনি ত্যাগ করতে বাধ্য করে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি/সিএমসি। এরপর শুধু চীনা শ্রমিকদের নিয়ে খনির উৎপাদন কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের সংকটের মুখে কয়েক দিন পরই কয়লা উত্তোলন তা পুরোপুরি করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত বছর লকডাউনের শুরু থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় খনির অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয় কোয়ারেন্টাইন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোভিড-১৯-এর টিকা নেওয়া ও করোনাকালীন খনির বাইরে বের না হওয়ার শর্তে বাংলাদেশি শ্রমিকদের খনিতে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। দীর্ঘ সাত মাস ধরে এভাবেই খনিতে কয়লা উত্তোলনের কাজ করে আসছিলেন তারা। স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, করোনায় তাদের খনির বাইরে বের হওয়ার বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও চীনা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ফলে পরিবার-পরিজন ছেড়ে খনি অভ্যন্তরে মাসের পর মাস থাকতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতি পাঁচ চীনা শ্রমিকসহ ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হলেও স্থানীয় শ্রমিকদের বিনা বেতনে খনির অভ্যন্তরে কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ সিদ্ধান্তে রাজি না হওয়ায় তাদের খনি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শুধু চীনা শ্রমিকদের নিয়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করে খনি কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তারা। 

স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, কয়লা উৎপাদন বন্ধ করায় হুমকিতে ৫২৫ মেগাওয়াটের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। সময়মতো কয়লা না পাওয়া গেলে কিংবা কয়লার ঘাটতি দেখা দিলে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে তাদের বেতন দেওয়া হলেও এর আগে ৭৩ দিন বেতন প্রদান সাপেক্ষে কোয়ারেন্টাইনে রেখেও তাদের বেতন প্রদান করা হয়নি।

খনির একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, খনির অভ্যন্তরে কোভিডের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের বের করে দেওয়া হয়েছে।
আগামী মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, গত মাসের ২০ তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে নতুন করে চুক্তি হলে আবারও শ্রমিকদের কাজে যোগদান করানো হবে। শ্রমিকদের বের করে দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে এমডি আরও বলেন, এখনো কোল ইয়ার্ডে প্রায় তিন লাখ টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে। এই মজুত দিয়ে তিন মাস পার্বতীপুরের ৫২৫ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানো সম্ভব।

বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সুলতান মাহমুদ বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গে খনি কর্তৃপক্ষের মতবিরোধের কারণে কয়েক দিন ধরে খনি এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিক রয়েছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত বড়পুকুরিয়ায় কয়লাখনির ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয় ২০০৫ সালে। তখন থেকেই কয়লা উৎপাদনে চীনের ঠিকাদারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। কোম্পানিটি পর্যায়ক্রমে কয়েকটি চুক্তির অধীনে ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে এই খনি থেকে মোট এক কোটি এক লাখ টন কয়লা উৎপাদন করেছে। গত ২০১৭ সালে কোম্পানির সঙ্গে চার বছর মেয়াদি চুক্তি করে সরকার। সে চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ১০ আগস্ট শেষ হচ্ছে।

Link copied!