টানা দেড় দিন দোকানপাট বন্ধ থাকার পর রোববার (১৭ জুলাই) নড়াইলের দিঘলিয়া বাজার খুলতে শুরু করেছে। অবশ্য এখনো অধিকাংশ হিন্দুর দোকান বন্ধ। যেসব দোকান ভাঙচুর করা হয়েছিল, তারা নিজ উদ্যোগেই মেরামতকাজ করছেন।
সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাহাপাড়ার অধিকাংশ বাড়ি এখনো তালাবন্ধ। ভয়ে বাড়ি আসতে পারছেন না বাসিন্দারা। ভাঙচুর আর লুটপাট হওয়া বাড়িগুলোতে যারা আছেন, তারাও আছেন আতঙ্কে। এ অবস্থার মধ্যেও রোববার রাতে গোয়ালের তালা ভেঙে দুটি গরু লুট হয়ে গেছে শিক্ষক সচিদানন্দ বিশ্বাসের। সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের উদ্যোগে দৈনিক প্রায় ৩০০ লোকের খাবার তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে ভুক্তভোগী পরিবার আর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রায় ২০০ জনকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এর আগে ১৫ জুলাই আকাশ সাহাকে আসামি করে একটি মামলা হয়। ১৭ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা করে। আকাশের তিন দিনের মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দিঘলিয়া বাজারের অনুপম ফার্মেসির শার্টার পুরোটাই ভেঙে মালামাল ও টাকা লুট করা হয়েছিল। দোকান মালিক অনুপম সাহা মিস্ত্রি এনে নতুন শার্টার তৈরি করছেন। আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা এখনো আতঙ্কিত। আর ক্ষতিপূরণ কে দেবে, জানি না।”
১৫ জুলাই রাতে হরিপদ মিষ্টান্নভান্ডারের প্রায় সাড়ে ৩ মণ নানা ধরনের মিষ্টি নষ্ট করা হয়ে। দুটি শোকেস ভেঙে তছনছ করা হয়। তার ক্যাশ ভেঙে নিয়ে গেছে ৩০ হাজার টাকা। দোকান গোছগাছ করলেও কবে ফের চালু করতে পারবেন তা বলতে পারেননি মালিক গোবিন্দ কুণ্ড। তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, “আমরা তো হিন্দু মানুষ। নরম মানুষ। আবার কোন সময় কী ঘটবে, তা বলা যায়?”
সাহাপাড়া মন্দিরে হামলার পরপরই সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাহাপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। সে সময় বাড়িতে গৌর চন্দ্র সাহার স্ত্রী পুত্র, তার বড় ভাই শিবসাহা তার দুই ছেলে-মেয়ে ছিলেন। আক্রমণের সময় তারা আরেক ঘরে তালা মেরে লুকিয়ে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা এসে তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আলমারি ভেঙে টাকা ও সোনা লুট করে নিয়ে যায়।
গৌর চন্দ্রের স্ত্রী মালা রানী বলেন, “আমার বিয়ের গয়না নিয়ে গেছে। ছেলের ঢাকায় যাওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা ছিল, তা-ও নিয়ে গেছে। মাশরাফী এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে। এখনো আমার ভাশুরসহ অন্যরা বাড়ি ফেরেনি।”
দিঘলিয়া বাজারে পান বিক্রেতা গোবিন্দ সাহার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে একদল আসে তারা তালা ভেঙে লুট করে চলে যায়। এরপর আরেক দল এসে ঘরে কিছু না পেয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গোবিন্দ সাহার ঘর মেরামতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিন ও কাঠ পাঠিয়েছেন। সোমবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে সংস্কার শুরু হয়েছে। একইভাবে সংস্কার শুরু হয়েছে পুরোপুরি ভেঙে ফেলা আখড়াবাড়ি মন্দির। আখড়াবাড়ি মন্দিরসহ ৪টি মন্দিরে পুলিশের দিন-রাত পাহারা রয়েছে। সাহাপাড়ার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের টহল, মূল সড়কে ঢোকার রাস্তায় র্যাব বাহিনী টহল দিচ্ছে ১৬ জুলাই সকাল থেকে। এলাকায় ২ শতাধিক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।