• ঢাকা
  • বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অশনি: কৃষকের স্বপ্নের ফসল হাঁটুপানিতে


মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২২, ০৬:৩৪ পিএম
অশনি: কৃষকের স্বপ্নের ফসল হাঁটুপানিতে

কৃষকরা যখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সেই সময় ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। গত দুইদিনের বর্ষণে হাঁটুপনিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল ধান। মেহেরপুরের সকল উপজেলাতেই একই রকম চিত্র।

ধান কেটে সরিয়ে নিলেও ক্ষতি ঠেকাতে পারেনি কৃষক। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা। জমি থেকে পানি বের না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে ভারি বর্ষণে মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কোথাও ধানের জমিতে হাঁটুজল, আবার কোথাও কাটা ধান পানিতে ডুবে আছে। হাঁটুজলে থাকা ধান কাটতেও পারেছেন না কৃষকরা। তলিয়ে থাকা ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা নিচ্ছেন দ্বিগুণ টাকা। এতে আরও লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষক।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি ধান চাষে খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত জেলায় ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। জেলায় ১৯ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে এবার ধানের আবাদ হয়েছে।

সদর উপজেলার কালাচাঁদপুর মাঠে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটছিলেন ৭০ বছর বয়সী কৃষক আলহামদু মিয়া।

আলহামদু মিয়া বলেন, “আমার দুই বিঘা জমিতে ধান ছিল। দুইদিন আগে কেটে ছিলাম, তারপর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন আমার স্বপ্ন পানিতে ভাসছে।”

সমিতি থেকে লোন নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন, এখন কিস্তি কিভাবে দেবেন তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

দুঃখ প্রকাশ করে আলহামদু মিয়া বলেন, “এ ধান পানির নিচে পড়ে থাকায় এখন খাওয়ার উপযোগিতা নেই। এইবার যা অবস্থা তাতে আমরা কি খাব এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”

মাঠের পর মাঠ বৃষ্টির পানিতে ধান হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে উল্লেখ করে উজুলপুর গ্রামের ধানচাষি আশাদুল ইসলাম বলেন, “অনেক চাষিই ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। ধানের জমিতে পানি জমে থাকায় কাটতেও পারছি না। অনেকে ধান কাটলেও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। ফলে খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এখন ধান কেটে বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠবে না।”

আরেক ধানচাষি ইয়াকুব বিশ্বাস বলেন, “জমি থেকে পানি বের না হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। ধানের রং ও স্বাদ নষ্ট হবে। ধান পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখন পানি বের না পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি আমরা।”

এদিকে জমিতে পানি জমে থাকায় ধানকাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ইয়াকুব বিশ্বাস অভিযোগ করেন, “বেশি টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। আমাদের ধান চাষে যা খরচ হয়েছে তার থেকে আরও বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, “চাষিদের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে যেন ধান নষ্ট না হয় সেজন্য ধান কাটার পর স্তুপ করে ঢেকে রেখে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

Link copied!