• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অচলাবস্থা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল চা-বাগান


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৬:১৯ পিএম
অচলাবস্থা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল চা-বাগান

টানা ১৯ দিনের কর্মবিরতির পর রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন চা-শ্রমিকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা ধার্য করায় খুশি তারা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সবাই।

চা-শ্রমিক নেতারা বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর শ্রমিক নেতারা চা-বাগানের পঞ্চায়েত নিয়ে বসেন। পঞ্চায়েত কমিটির প্রত্যেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তে তারা অনেক খুশি।”

নতুন মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রধান। তার সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করি। আর চা-শ্রমিকরা আন্দোলনের সময়ও বলেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী বললেই তারা কাজে যোগ দেবেন। তার যেকোনো সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা মেনে নেবেন। তাই রোববার থেকেই তারা কাজে যোগ দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “পঞ্চায়েতের বাইরে দুই-চারটা ছেলে প্রতিবাদ করছে। ওরা চা-শ্রমিক না। সিলেট ভ্যালির আওতাধীন ২৩টি চা-বাগানের মধ্যে কেবল মালনিছড়া ও লাক্কাতুড়ার কিছু শ্রমিকের মধ্যে সামান্য সমস্যা আছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে।”

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা ঠিক করে দেওয়ার পর আমরা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি নিয়ে বসেছি। এতে কারও কোনো আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তে চা-শ্রমিকরা সবাই খুশি। সবার একটাই প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কিছু শোনার। তিনি মজুরি যা নির্ধারণ করে দেবেন শ্রমিকরা তা মেনে নেবে। আমরা মেনেও নিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক ভ্যালিতে মিটিং হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সানন্দে মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়ে এসেছি। আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যা করতে পারতাম না তা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে চা-শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আমরা ভ্যালির সব নেতাদের বলেছি।”

চা-শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদস্য রিতেশ মোদি বলেন, “আমার প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী চা-শ্রমিকদের মজুরি আড়াইশ’ না হোক, ২শ’ টাকা করে দেবেন। তবে এটাও ঠিক চা শিল্প ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা মজুরি ধার্য করে দিয়েছেন। তার সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নিচ্ছি। এরপরও অনুরোধ থাকবে, বছর শেষে নতুন চুক্তি বাস্তবায়নে শ্রমিকদের মজুরি পূণর্বিবেচনার। কেননা বর্তমান বাজার দর, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এ মজুরি দিয়ে সংসার চালানো চা-শ্রমিকদের জন্য কঠিন। তাই অন্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্তত বছর শেষে নতুন চুক্তিতে যাতে মজুরি পূণর্বিবেচনা করেন মালিকরা, সেই অনুরোধ জানাই।”

শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা-বাগান মালিকদের বৈঠক শুরু হয়। এতে দেশের বৃহৎ ১৩টি চা-বাগানের মালিক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এদিন বিকালে বৈঠকের খবর জানতে চা-শ্রমিকদের চোখ গণমাধ্যমের দিকে ছিল। তারা বৃষ্টিতে ভিজেও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে বাগানে বাগানে পৌঁছালে তারা খুশিতে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাগানে আনন্দ মিছিলও বের করা হয়।

মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দুইদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন চা-শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের এ দাবিতে মালিক পক্ষ সায় না দেওয়াতে ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান। এরপর দেশের ১৬৮টি বাগানে (ফাঁড়ি চা-বাগানসহ ২৩২টি) ছড়িয়ে পড়েছিল এ আন্দোলন। চা-শ্রমিকরা তাদের দৈনিক কাজ বন্ধ রেখে রাজপথে নেমে সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

আন্দোলন থেকে ফেরাতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাসচিব থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনও ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের লাক্কাতুড়া চা-বাগানের গলফ মাঠে চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেই তারা কাজে ফিরে যাবেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে ধার্য করে দেওয়া ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজে ফিরছেন চা-শ্রমিকরা।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!