• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধুর হিজলগাছ


বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১, ১২:৫৩ পিএম
স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধুর হিজলগাছ

আজ বঙ্গবন্ধু নেই, আছে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির পাশের সেই হিজলগাছটি। জাতির জনকের জন্মধন্য টুঙ্গিপাড়ার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নেই সেই ছোট্ট খোকা (বঙ্গবন্ধু)। গাছটির ছায়ায় সব সময় থাকে মানুষের আনাগোনা। কিন্তু সবার মাঝ থেকে কেড়ে নেওয়া মানুষটিকে এখন কেউ খালি চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু তিনি আছেন সবার অন্তরে। 

গ্রাম, শহর বা বিদেশের হাজার স্মৃতির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোরের অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির পাশের বাঘিয়ার খাল পাড়ের সেই হিজলগাছটি। বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা বা রাজনৈতিক জীবনের অনেক স্মৃতি বহন করে এই হিজলগাছ। এখনো রয়েছে সেই হিজলতলা ঘাটলা। যেখানে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। খেলতেন জলকেলিও।

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির একেবারেই পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত খালটি। ছোট হলেও বেশ পরিপাটি করে রাখা হয়েছে খালের দুপাশ। দুপাড় সবুজে ভরা। ইটের তৈরি ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়েছে খালটির উভয় পাড়। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পাড়ে শান বাঁধানো ঘাট করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে। সেই ঘাটে এলাকার মানুষ গোসল করে থাকেন।

আজ বঙ্গবন্ধু নেই, আছে তাঁর সেই প্রিয় ঘাট। আছে সেই হিজলগাছ। ঘাটের দুপাশে তালবীথি। সেই ঘাটে হিজলগাছটি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। হিজলগাছটি ঠিক যেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কথার সাক্ষী হয়ে আছে। আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয় মানুষটির জন্য আজও ডুকরে কাঁদে গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা। ঘাটপাড়ে লেখা—‘এই তো সেই হিজলতলা। যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোসল করতেন।’ 

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালের পাড় ও হিজলগাছের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রতিদিনই জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত হিজলতলাসহ খালটি পরিদর্শনে আসেন শত শত বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা। সারা দিন বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর স্পর্শ। দল বেঁধে ছবি তোলেন তারা। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে দেন। কিন্তু দেড় বছর ধরে করোনার কারণে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম হচ্ছে। করোনা চলে গেলে আবারও ভিড় হবে এই স্থানে।

হিজলতলা দেখতে আসা দর্শনার্থী বরিশালের আগৈলঝাড়া গ্রামের অমিত কুমার দে বলেন,“ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি দেখিনি, কিন্তু টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর অনেক স্মৃতি রয়েছে। তাই এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, হিজলতলা, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্মৃতি ঘুরে ঘুরে দেখেছি। যতই দেখছি ততই অন্য রকম একটা অনুভূতি উপলব্ধি করছি। মনে হয় এখানেই থেকে যাই। প্রথমবার এসে আমার খুব ভালো লেগেছে। সেই সঙ্গে দুঃখ হচ্ছে এই মহান মানুষটিকে কেন ঘাতকরা সপরিবার হত্যা করল।” 

অনুভূতি ব্যক্ত করে মাদারীপুর জেলার উত্তম রায়, গণেশ রায়, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার সাইফুল আলম, মোল্লাহাটের রফিক আলী মিয়া ও রাসেল শেখ বলেন, “বঙ্গবন্ধু গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের ভালোবাসতেন। এই কারণে তিনি প্রকৃতিকেও ভালোবাসতেন। প্রকৃতির এসব গাছপালাকে ঘিরে তাঁর বেড়ে ওঠা। এই স্মৃতিকে দেখতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।”

টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধু সৈয়দ নূরুল হুদা মানিকের ছেলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশেই বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার ছোট খাল এবং ঘাটের হিজলগাছ অনেক স্মৃতি বহন করে চলেছে। এই হিজলগাছের নিচে খালের ঘাটে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। সেই হিজলগাছটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যা দেখে জাতির পিতার জীবনযাপন অনুভব করেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশী শেখ লুৎফর রহমান (৭০) বলেন, খালের ঘাটে স্বচ্ছ পানিতে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন, খালে সাঁতার কাটতেন, হিজলতলায় অবসর সময় কাটাতেন। বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু নৌকায় বের হতেন। সেই থেকে হিজলগাছটি আজও বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতি কথার সাক্ষী হয়ে আছে। 

টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনচেতা। এলাকার সমবয়সীদের নিয়ে তিনি এই হিজলগাছের নিচে গল্প করতেন। বাড়িতে যখন আসতেন এই হিজলতলায় বসে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। এখানে এই খালের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতেন। নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই হিজলগাছের সঙ্গে। তাই তো পৌরসভার পক্ষ থেকে এখানে শান বাঁধানো ঘাট ও সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়ার যেখানে যেখানে বঙ্গবন্ধুর স্পর্শ আছে, সেখানেই স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করার চেষ্টা করেছি।”

Link copied!