• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন সোনাকান্দা দুর্গ


আতাউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ০৮:৪১ এএম
স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন সোনাকান্দা দুর্গ

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা এলাকায় ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মুঘল শৌর্যবীর্য আর স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন ঐতিহাসিক সোনাকান্দা দুর্গ। দুর্গের খিলানের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। ইতিহাসের ঘটনাবহুল অতীতে কান পাতলে শোনা যায় ঘোড়ার খুরের আওয়াজ, সৈন্যদলের পদচারণ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, আর কামানের গোলার শব্দ।

পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রাজধানী ঢাকাকে রক্ষার জন্য সপ্তদশ শতকে বাংলার তৎকালীন সুবেদার মীর জুমলা ঢাকার আশপাশে তিনটি জলদুর্গ নির্মাণ করেন। সোনাকান্দা দুর্গ তার একটি।

চতুর্ভুজাকৃতির সোনাকান্দা দুর্গের আয়তন ৪ হাজার ৯৩৩ দশমিক ৯২ মিটার। দুর্গটিতে চোখে পড়ে দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। একটি হচ্ছে এর এক দশমিক ৬ মিটার চওড়া এবং ৩ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুরক্ষাপ্রাচীর। প্রাচীরে গোলা নিক্ষেপের জন্য রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। এই ছিদ্র দিয়ে বন্দুক বা হালকা কামান ব্যবহার করে জলদস্যুদের দিকে শেল নিক্ষেপ করা হতো। অপরটি হচ্ছে পশ্চিম দিকের উঁচু মঞ্চ বা গোলাকার কামান প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হতো। উঁচু মঞ্চ থেকে নদীপথে আক্রমণকারীদের দিকে তাক করা থাকত শক্তিশালী কামান। ‍উঁচু মঞ্চে ওঠার জন্য একটি সিঁড়ি রয়েছে।

দুর্গের চার কোণে রয়েছে অষ্টভুজাকৃতির চারটি বুরুজ। বুরুজের প্রতিটি কোনায় রয়েছে গোলাকার মঞ্চ।

মুনশী রহমান আলী তায়েশ তার ‘তাওয়ারীখ ই ঢাকা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, আরাকানি ও মগদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এখানে সৈন্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

দুর্গের একমাত্র প্রবেশ তোরণটি উত্তর দিকে অবস্থিত। হরেক রকম কারুকাজে সুশোভিত তোরণটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দুর্গটি দেখাশোনা করছে। বন্দর উপজেলা প্রশাসন দুর্গটি রক্ষার জন্য নিয়েছে নানা উদ্যোগ বলে জানান ইউএনও শুক্লা সরকার। তিনি বলেন, দুর্গের ইতিহাসসংবলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার বাংলা ও ইংরেজিতে দুর্গের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

জনশ্রুতি আছে, ঈশা খাঁ কেদার রায়ের কন্যা সোনা বিবিকে এ দুর্গে এনে রেখেছিলেন। তিনি কেঁদেছিলেন বলে দুর্গের নামকরণ হয় সোনাকান্দা দুর্গ। দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা দুর্গটি দেখতে আসেন। দর্শনার্থী মহিউদ্দিন সিদ্দিকী জানান, কেল্লার সুপরিসর চত্বরে একটি জাদুঘর স্থাপিত হলে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে সোনাকান্দা দুর্গ।

Link copied!