পঞ্জিকা অনুসারে আজ অগ্রহায়ণের ১ তারিখ। মাসের প্রথমদিন অনুষ্ঠিত হয় জামাই মেলা। জয়পুরহাটের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এ দিনটির জন্য, এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। ১০০ বছর আগে থেকে চলে আসা ঐতিহ্যের ধারক মেলাটি উপলক্ষে আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও।
জামাই মেলায় গিয়ে দেখা যায় সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, বিগহেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। ভোর থেকে বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। তিন কেজি থেকে শুরু করে ৩৬ কেজি ওজনের মাছ। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন ঐসব মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে জামাইদের নিয়ে বসে মাছের মেলা। এই মাছের মেলায় শুধুই মাছ কেনার বিষয় নয়, আছে একধরনের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা জামাইদের। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ করে শ্বশুররা।
পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা অগ্রহায়ণ (বৃহস্পতিবার) উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে বসে প্রায় শতবছরের এই মাছের মেলা। মেলায় অংশ নেন উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মোবাদ ইউনিয়ন ও কালাই পৌরসভার শতাধিক গ্রাম-মহল্লার মানুষ। এই মেলাকে কেন্দ্র করে মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে শতশত মানুষ উৎসব দেখতে আসেন। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব।
সরেজমিন মাছের মেলায় গেলে দেখা যায়, মেলায় মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল প্রায় ৩৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ এর দাম হাকানো হয় ৪৬ হাজার টাকা। উপজেলার বেগুনগ্রামের মোছা. শাপলা একটি ১৫ কেজি ওজনে রুই মাছের দাম হাকান ৯ হাজার টাকা। একটি বড় সিলভার কার্প মাছের দাম হাকানো হয় ১৭ হাজার টাকা। মানুষজন মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতে পেরে খুশি। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
মেলায় মাছ বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, “জামাইদের এই মাছের মেলার জন্য এলাকার বিভিন্ন পুকুর ও নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। এ মেলাকে লক্ষ্য করে চলে আমাদের মাছ ধরার উৎসব।”
মেলায় মাছ কিনতে আসা তরিকুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, “অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ৩৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ ৪২ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”
মেলা সম্পর্কে কালাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তোফিকুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, “এই মাছের মেলাটি প্রায় শত বছর ধরে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে বহন করছে।”
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই মেলাকে লক্ষ্যে করে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন।”