• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট

রাত বাড়লেই ফেরিতে বসে জুয়ার আসর


রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২, ১১:৩০ এএম
রাত বাড়লেই ফেরিতে বসে জুয়ার আসর

দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌরুট। এই নৌরুট ব্যবহার করে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকাতে যাতায়াত করেন। এই জনবহুল নৌরুটটি রাতের বেলায় হয়ে ওঠে ভয়ানক।

রাত যত বাড়তে থাকে, রূপ বদলাতে থাকে দৌলতদিয়া। এই নৌরুটের ফেরিতে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জুয়ার আসর। আর সেই জুয়াড়িদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

যেসব যাত্রী প্রায়ই এই নৌপথে যাতায়াত করেন, তারা সতর্ক থাকলেও যারা হাতে গোনা কয়েকবার এই নৌপথের যাত্রী, তারাই ফাঁদে পড়ে এই জুয়াড়িদের।

এই নৌ রুটে ১৬টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করে। ফেরিতে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকেই প্রায় প্রতিটি ফেরিতে জুয়ার আসর বসে।

তারা আরও জানান, ‘লাগলেই ডাবল, লাগলেই ডাবল’ এই চটকদার কথা বলে জুয়াড়িরা সাধারণ মানুষদের আকৃষ্ট করে। চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি বসে কেরোসিনের কুপি জালিয়ে এই জুয়ার আসর বসায়। লোভে পড়ে টাকা দিয়েই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে একাধারে চলে এ খেলা। ফেরিঘাটে এসে ভিড়লে বাতি নিভিয়ে ফেরিতে থাকা হকারদের দোকানের আড়ালে সরঞ্জাম রেখে মুহূর্তেই উধাও তারা। ফেরিটি আবার লোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও ফেরিতে উঠে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, “আমি তিনবারে পাঁচ হাজার টাকা করে ধরেছি। মোট ১৫ হাজার টাকা হেরেছি। এগুলোর বন্ধ করা প্রয়োজন।”

ফেরিতে থাকা কয়েকজন হকার জানান, এই জুয়ার আসর খেলা আজ নতুন না। প্রশাসন আগে নিয়মিত অভিযান চালালেও এখন আর অভিযান চোখে পড়ে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি সময় দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড এলাকার একটি চক্র এর নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন নিয়ন্ত্রণ করছে তিন থেকে চারটি চক্র। এই সব চক্রের সদস্যসংখ্যা কমপক্ষে ২০।

এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, ফেরিতে জুয়াড়িদের সক্রিয়তার খবরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েও জামিনে বের হয়ে আবার এই কাজ শুরু করেছেন।

দৌলতদিয়া ঘাটের নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, “ফেরিতে জুয়ারি চক্রে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যেই ফেরিতে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু আমাদের উপস্থিতি টের পেলে তারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করে না। তাছাড়া অভিযানে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। তাই সবাইকে এখনই সচেতন হতে হবে, না হলে এই চক্র বন্ধ করা সম্ভব না।”

নৌ পুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “আমাদের অভিযান চলমান। কিন্তু জুয়াড়িরা সব সময় আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি।”

Link copied!