মাশরুমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কাঁচা অবস্থায় মাশরুমে প্রচুর ‘ভিটামিন বি’ পাওয়া যায়। মাশরুম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার। ফলে মাশরুম দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মানুষের কাছে। বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদেরও।
২০১৮ সালে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম সানার ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেনের পরিচয় হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় মাশরুম চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছোট পরিসরে মাশরুম চাষ শুরু করেন সাদ্দাম।
সাদ্দামের খামারে মাশরুম উৎপাদন শুরু হলে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রির জন্য প্রচার করেন। সেখানে ভালো সাড়া পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদ্দামকে।
সাতক্ষীরায় মাশরুম উদ্যোক্তা হিসাবে মানুষের কাছে পরিচিত লাভ করেছেন তিনি। সাতক্ষীরা শহরে কসমিক মাশরুম ক্যাফেটেরিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেখানে বিক্রি করছেন মাশরুমের চপ, শিঙাড়া, খিচুড়ি, চাওমিন, নুডলস, কফিসহ নানা রকমের মুখরোচক খাবার। সাদ্দামের দেখে অনেক শিক্ষার্থী এ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
মাশরুমচাষি সাদ্দাম হোসেন জানান, সাতক্ষীরা মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়াতে অনেক কষ্ট হয়ছে। অল্প খরচে মাশরুম চাষ করা যায়। আমি প্রথমে চার হাজার টাকা দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমার প্রজেক্টটি এক বিঘা জমির ওপর। এখন প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি উপার্জন করি। আমার এখানে পাঁচজন শ্রমিকের কাজের সুযোগ হয়েছে। আমার থেকে অনেক বেকার যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করেছে। আমি কিছুদিন আগে একটা কসমিক মাশরুম ক্যাফেটেরিয়া তৈরি করেছি।”
নগরঘাটা গ্রামের অঞ্জানা সরকার বলেন, “সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে মাস্টার্সে লেখাপড়া চলাকালীন অনলাইনে মাধ্যমে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জেনে ৪ হাজার টাকায় ১০০ প্যাকেট মাশরুম দিয়ে চাষ শুরু করি। এক মাস পরিচর্যা শেষে মাশরুম বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। সেখান থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করি।”
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল করিম বলেন, “১৩ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে ২৫-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেছি। বর্তমানে আরও বড় পরিসরে চাষ করার জন্য ঘর তৈরি করেছি।”
কুখরালী গ্রামের রাজিব আহমেদ বলেন, “গরুর খামারে লস হওয়ায় সেখানে গড়ে তুলেছি প্রিন্স মাশরুম সেন্টার। ৮ লাখ টাকা খরচ করে ১২ হাজার প্যাকেট মাশরুম তুলেছি ফলন আসার সময় হয়েছে। আশা করি এখান থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন হবে। এ মাশরুম বিদেশে রপ্তানির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।“
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৫০-৬০ জন লোক পারিবারিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করছে। এদের মধ্যে আবার ২-৫ জন লোক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি।