দেশব্যাপী আলোচিত মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই শিশু সুরাইয়া স্কুলে ভর্তি হয়েছে। রোববার (২ জানুয়ারি) সকালে মাগুরা পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সকালে মা নাজমা বেগমের কোলে চড়ে সুরাইয়া প্রথম স্কুলে যায়।
ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা আক্তার।
সুরাইয়ার মা নাজমা বেগমের অভিযোগ, মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় চিকিৎসার সময় দেশের মন্ত্রী, এমপিসহ বড়-বড় কর্তাব্যক্তিরা সুরাইয়ার চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ সারা জীবনের দায়িত্বভার নিতে চেয়েছিলেন। কেউ তাকে ডাক্তার, আবার কেউ তাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লেখাপড়ার দায়িত্ব তো দূরে থাক, এখন কেউ তার খোঁজখবর পর্যন্ত রাখে না। যে কারণে বাধ্য হয়েই পারিবারিক উদ্যোগে সুরাইয়াকে মাগুরা পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে।
মা নাজমা বেগম আরও বলেন, গুলির আঘাতে সুরাইয়ার দুই পায়ের শক্তি হারিয়েছে। ডান চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সুরাইয়া ডান চোখে কিছু দেখতে পায় না। বাঁ চোখের অবস্থাও ভালো না। চিকিৎসক জানিয়েছে, ডান চোখে আর দেখতে পাবে না। ডান চোখের উন্নত চিকিৎসা না করালে বাঁ চোখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তিনি দুঃখ করে বলেন, সমবয়সীরা বাচ্চারা এখন দৌড়ে বেড়ালেও সুরাইয়া এখন দাঁড়াতেও পারে না। কেউ দুহাতে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেও ছেড়ে দিলেই সে পড়ে যায়। তার গলায় একটি টিউমারও ধরা পড়েছে। সুরাইয়ার ডান পাশটিতে জোর কমে যাচ্ছে। ডান হাতে সে কাজ করতে পারে না। তবে চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই নিয়মিত ঢাকায় নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর।
সুরাইয়ার বাবা চা-দোকানি বাচ্চু ভুইয়া বলেন, সুরাইয়ার জীবনের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না। মন বোঝে না তাই, ৬ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। জানি না তার লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি না।
বাচ্চু ভুইয়া আরও জানান, ছয় বছরেও গুলিবিদ্ধের ঘটনার কোনো বিচার পাননি। শুধু আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে দিন কেটেছে। আসামিরা বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মাগুরা জজ আদালতের পিপি এস্কেন্দার আজম বাবলু জানান, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারক না থাকায় মামলাটির বিচার কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এখন সে সমস্যা সমাধান হয়েছে। মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মামলাটি বর্তমানে সাক্ষী গ্রহণ পর্যায়ে আছে। সরকারপক্ষ এ মামলা বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য অত্যন্ত আন্তরিক।
মাগুরা জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, সুরাইয়ার জন্য তার বাবা-মা চিকিৎসা, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্রসংক্রান্ত সহায়তা চাইলে, তিনি তা দিতে প্রস্তুত। কারণ এ ধরনের সহায়তার জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে।
২০১৫ সালের ২৩ জুলাই বিকেলে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়া এলাকায় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে এলোপাতাড়ি গুলিতে নাজমা বেগম ও তার গর্ভে থাকা শিশু সুরাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোমিন ভুইয়া নামে সুরাইয়ার এক চাচা।
মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক ডা. সফিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক টিম জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুরাইয়াকে পৃথিবীর আলো দেখান। পরে তার অবস্থার গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনার দুই দিন পর মোমিন ভুইয়া হত্যা ও নাজমা বেগম গর্ভে গুলিবিদ্ধর ঘটনায় ২১ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়। যার মধ্যে আসামি আজিবর শেখ পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন।