বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। নগরীতে ভরাট হয়ে যাওয়া অসংখ্য নালা পরিষ্কার, নতুন করে তৈরিসহ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা।
সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফেসবুক পেজে বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের জলাবদ্ধ স্থানের নাম জানতে চাওয়া হয়। এতে ৩০০ জনের মন্তব্যে নগরীর প্রায় ১০০ জলাবদ্ধ স্থানের নাম উঠে আসে। সিটি কর্তৃপক্ষ এসব তালিকা যাচাই-বাছাই করে ২৭টি ওয়ার্ডে ৪২২টি নালা পরিষ্কার ও ১০টি ভরাট হওয়া খাল খননে উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ খাল দখলদারদের বিরুদ্ধেও অভিযানে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মন্তব্যে দেখা যায়, নগরীর এলাকার মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিষ্ণুপুর মধ্যপাড়া মসজিদ সড়ক, মুনসেফ কোয়ার্টার পেশকার বাড়ি সড়ক। ২ নম্বর ওয়ার্ডে ছোটরা পশ্চিমপাড়া। ৩ নম্বরে পশ্চিম কালিয়াজুরী, রেসকোর্স, কবরস্থান ফটক, ইলিয়াস খান মসজিদ সড়ক, কালিয়াজুরী চিড়িয়াখানা সড়ক, কাঠেরপুল, উত্তর রেসকোর্স, কালিয়াজুরী প্রাইমারি স্কুল থেকে মুড়াপাড়া রেলগেট পর্যন্ত এলাকা জলাবদ্ধ থাকে।
নগরীর আরও জলবাদ্ধ স্থানগুলো হচ্ছে
আমানিয়াবাড়ি হয়ে ভাটার পুকুর বাঁশ মুড়া পর্যন্ত, বিষ্ণুপুর চৌমুহনী কবরস্থান সড়ক, কাপ্তানবাজার, আমানিয়াবাড়ি থেকে ভাটার পুকুরপাড়, জজকোর্ট হয়ে মগবাড়ী চৌমুহনী পর্যন্ত। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে খানবাড়ি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে অশোকতলা রেলগেট যাওয়ার পথ। ডিসিগলি সড়ক, উত্তরপাড়া, অশোকতলা প্রফেসরপাড়া, মদিনা মসজিদ সড়ক, রামকৃষ্ণ আশ্রমের দক্ষিণে, ফজল খান ছাত্রাবাস সড়কের শেষ অংশ। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া রেসিডেনসিয়াল স্কুল সড়ক, ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধবিহারসংলগ্ন, শিক্ষা বোর্ডের পেছনে ও টাওয়ারের গলি, কামিনী চন্দ সরণি, কালিতলা, মদিনা মসজিদ সড়ক, ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন চৌধুরীপাড়া কবরস্থান থেকে শুরু করে স্টেশন সড়ক পর্যন্ত, দক্ষিণ বাগিচাগাঁও স্বর্ণকুটিরের পাশের গলি।
১১ নম্বরে সদর হাসপাতাল সড়ক, ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়ক উজির দিঘিরপাড় বড় নালা, মনোহরপুর রূপালী ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকের গেট পর্যন্ত। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে দিগাম্বরী তলা মসজিদের সড়ক, চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের পেছনের অংশ, থিরা পুকুরপাড় স্কুলের পেছনের অংশ। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রহমান খন্দকার সড়ক, দক্ষিণ চর্থা রিকশা গ্যারেজ থেকে সরদারবাড়ি সড়ক, দক্ষিণ চর্থা পশ্চিমপাড়া, মহিলা কলেজসংলগ্ন খাল, হালুয়াপাড়া সড়ক, কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা গলি।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় মুরাদপুর থেকে হাউজিং এস্টেট পর্যন্ত প্রধান তিন জায়গায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় মুরাদপুর বড় চৌমুহনী থেকে অহিদউল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, মুরাদপুর ভূঁইয়া পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, মুরাদপুর নমঃশূদ্রপাড়া।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বজ্রপুর প্রাইমারি স্কুল থেকে মুরাদপুর চৌমুহনী পর্যন্ত, বজ্রপুর সার্কুলার সড়ক। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরাইশ পূর্বপাড়া। ১৭ নম্বরে পাথুরিয়াপাড়া সেম্বা পুকুরপাড়, ডিবি গলির শেষাংশ, নুরপুর মাতৃসদন ক্লিনিকসংলগ্ন এলাকা। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাউজিং এস্টেট, কাটাবিল, হজরতপাড়া। ১৯ নম্বরে উত্তর রসুলপুর, ডুলিপাড়া, পূর্বপাড়া। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে উনাইশার হিন্দুপাড়া। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের বিপরীত গলির সড়ক।
২৩ নম্বরে মনিপুর দক্ষিণ পাড়া, চাঙ্গিনী দক্ষিণ মোড়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গন্ধমতি-কোটবাড়ী সড়ক। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ ধরনের ভঙ্গুর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কথা জানান এক বাসিন্দা। এ ছাড়া নগরীর চকবাজার থেকে রাজগঞ্জ সড়ক, ধর্মপুর কলেজ সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ স্থানের জলাবদ্ধতার কথা লিখেছেন নগরবাসী।
আবু সুফিয়ান রাসেল নামের এক বাসিন্দা লিখেছেন, “টমছম ব্রিজ নিউ হোস্টেল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা পর্যন্ত কান্দিখাল ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে আছে। এসব উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। অবৈধ দখলই নগরীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।”
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাউছারা বেগম সুমি, পপি মনিসহ অনেকে লিখেছেন এই ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের কথা। লিখেছেন, বর্ষাকালে রেসকোর্স ও কাঠেরপুল এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে ওয়ার্ডবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মো. ফখরুল আলম মিঠু নামের এক বাসিন্দা লিখেছেন, “পুরোনো ম্যাপ দেখলে বোঝা যায় কী পরিমাণ জলাশয় ছিল, বর্তমানে যা ১০ শতাংশের কম। সর্বত্র জলাশয় ভরাটের প্রতিযোগিতা চলছে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, “ফেসবুক পেজের সবার মন্তব্য তালিকা করা হয়েছে। সিটির তালিকার সঙ্গে এগুলো সমন্বয় করে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মতামতসহ চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ভরাটকৃত ৪২২টি নালা ও ১০টি খাল খনন করা হবে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বর্ষার আগেই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “নগরীর ভরাটকৃত সব নালা ও খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে। বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়, সে জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি নালা ও খাল পরিষ্কার করার সময় উপস্থিত থেকে তদারকি করা হয়।”