পাবনার সুজানগর ও চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগহীন দুটি ব্রিজ নির্মাণের ২১ বছর অতিক্রম করলেও কাজে আসছে না ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর। সরকারের প্রায় ৬৫ লাখ টাকার এই ব্রিজগুলো জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্মাণ করলেও এগুলো দীর্ঘদিন ধরে জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামে ৫০ লাখ টাকা ও সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের রামাকান্তপুর গ্রামে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে এই ব্রিজ দুটি নির্মাণ করে। নির্মাণের ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও দুপাশে কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সড়কের মাঝখানে দ্বীপের মতো একাকী দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া সেতু দুটি কোনো কাজে আসছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০ ফুট উচ্চতার সেতুটি ২০০১ সালে নির্মিত হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এই সেতুটিও জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না। সমাজ গ্রামের বাসিন্দা জালাল প্রামাণিক বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় সমাজ, বলচপুর, মিয়াপাড়া, গদাইরূপসি, বানিয়াবহু, সাতবাড়িয়া, ময়দানদিঘীসহ ৭টি গ্রামের মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এত টাকা দিয়ে সেতু বানানোর পর এটি আজও ভোগ করতে পারেনি এলাকাবাসী। রাস্তা ও সেতুটির সমস্যার সমাধান হলে এলাকাবাসী ফসল আনা-নেওয়াসহ দৈনন্দিন কাজে অনেক উপকার হতো বলে দাবি তার।
স্থানীয়রা জানান, ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণের ২১ বছরেও কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। কারণ সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নেই। সেতুটি অনেকটা দ্বীপের মতো একাকী দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের এতগুলো টাকা গচ্চা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
এ ব্যাপারে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, “আমি সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছি। সেতুটির বিষয়ে আমার ভালোভাবে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করব।”
চাটমোহর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, “নতুন যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সমাধানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
এদিকে জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের রামাকান্তপুর গ্রামে ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফাঁকা মাঠে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতুটি নির্মাণ করে। কিন্তু প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার সেতু নির্মাণ করলেও এর দুপাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে এলাকার লোকজন সেতুর কোনো সুফল পাচ্ছে না।
রামাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা অকিল উদ্দিন জানান, গাজনার বিলবেষ্টিত গ্রামটি বৃষ্টির পানিতে বছরের প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধ থাকে। পানি নেমে গেলে মাঠে ফসল আবাদ শুরু হয়। মাঠ থেকে ফসল আনার জন্য স্থানীয় কৃষকরা একটি সেতু ও সড়ক নির্মাণের দাবি জানালেও দীর্ঘদিনেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। তাই স্থানীয় লোকজন সেতুর পাশ দিয়ে মাটি ফেলে একটি সরু রাস্তা তৈরি করেছেন। তিনি আরও জানান, তিনটি গ্রামের মানুষ সেতুর পাশের এই সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বর্ষার সময় এ এলাকা ডুবে যায়। তখন নৌকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
সুজানগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, “অনেক আগে ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় আমি ভালোভাবে জানি না। তবে খুব শিগগির সেতুটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”