• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ৩ রজব ১৪৪৬

বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে কেউ এগিয়ে আসেনি


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ০৬:১৮ পিএম
বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে কেউ এগিয়ে আসেনি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর লাশ দাফনে বাধা দিয়েছেন এলাকাবাসী।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। গ্রামবাসীর বাধা দেওয়ার পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর সদস্যরা লাশের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।

জানা গেছে, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ গত ৩০ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার গেজেট নং ৫০৮৩, লাল বই নং ০২০৩০৪১২০৯। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর স্ত্রী লুৎফুর নাহার (৬৫) ও তার পরিবারের ৫ সদস্যও বর্তমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে চট্টগ্রাম থেকে লাশ দাফন কাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজন ও গ্রামীবাসীর বাধা দেন।

পরবর্তী সময়ে তারা মিরসরাই সদর ইউনিয়নের শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে বাবার লাশ নিয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে লাশের গোসল শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে কবরস্থানে লাশ নিয়ে যান। লাশ নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমামও জানাযায় আসেননি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের লোকজন লাশের গোসল করানো, কবরের মাটি খোঁড়া ও দাফন করতে পারবেন না বলে জানান। আমাদের বাড়ির গালিব নামে একজন বাড়ির প্রবেশমুখে বাঁশ পুতে দেন; যাতে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে।

পরবর্তী সময়ে বিষয়টি ১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নকে জানালে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর মাধ্যমে লাশ পরিবহন ও গোসলের ব্যবস্থা করেন। লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমাম জানাযার নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানালে শেষ বিদায়ের বন্ধু করেরহাট ইউনিয়ন টিম লিডার মাওলানা ইসমাঈল নামাজের ইমামতি করেন।

জাহাঙ্গীর আরও বলেন, “আমি বুধবার সকাল ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় যাই বাবার মৃত্যুর খবরটি দেওয়ার জন্য। তিনি ঘুমে থাকায় দেখা করতে পারিনি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করি। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদকে মোবাইলে বাবার মৃত্যু ও জানাযার সময় সকাল ৯টায় নির্ধারণের বিষয়টি জানাই। তিনি গার্ড অব অনারের বিষয়ে ইউএনওকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।

করেরহাট ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আবছার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজদ উল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজেও অসুস্থ হওয়ায় জানাযায় যেতে পারিনি। তার বাড়ি ও গ্রামবাসীর বিরোধীতার কারণে পরিবারের লোকজন তাড়াহুড়া করে দাফন করে চলে গেছে বলে শুনেছি।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সমন্বয়ক (সেবা) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, “করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর দাফন কাফনে এলাকাবাসী বাধা দেন। পরবর্তীতে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও তার ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশের গোসল, জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সদস্যরা। যেখানে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের ক্বারি নোমান, ইসমাঈল বিন মোজাম্মেল, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মাওলানা মাহমুদ হোসেন, মোঃ নুরুল আবচার, মো. এরাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।”

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদ বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহর লাশ দাফনের জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও তার পরিবারের লোকজন সকাল ৯টায় তাড়াহুড়া করে দাফন করে ফেলে। ফলে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। ওনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি করে সকাল ৯টায় দাফন করে শহরে চলে যায়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসী বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি; এটি জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।

Link copied!