ফেনীতে বলসুন্দরী (কুল) বাগান করে প্রথম বছরেই চমক দেখিয়েছেন ভূমিহীন বর্গাচাষী আছমত আলী। ৪০ শতক জমি ইজারা নিয়ে বলসুন্দরীগাছের চারা লাগিয়ে প্রথম বছরেই ফল ও সবজি চাষ করে আয় করেছেন লক্ষাধিক টাকা। জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই তার এই ছোট্ট বাগানটি দেখতে যাচ্ছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে তার এই সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজেরাই বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আছমত আলীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলগঞ্জ উপজেলায় হলেও সেখানে বর্তমানে তার কোনো বাড়িঘর ও জমিজমা নেই। ওই এলাকার একসময়ের সচ্ছল কৃষক মেঘনার ভাঙনে এখন ভূমিহীন। কয়েক বছর আগে জীবিকার সন্ধানে কমলগঞ্জ থেকে ফেনী চলে আসেন। ফেনীতে সদর উপজেলার কাজিরবাগ এলাকায় ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে দিনমজুর হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন লোকের কাজ করতেন। একসময় কিছু জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদের চিন্তা তার মাথায় ঢুকে। তারপর এলাকায় কিছু জমি ইজারা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু এতেও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুল করিম মজুমদারের পরামর্শে ৪০ শতক জমিতে গত বছরের মার্চে ১০৫টি বলসুন্দরী কুলের চারা রোপণ করেন।
কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শেই চারাগুলোর পরিচর্যা শুরু হয়। অল্পসময়ের মধ্যে চারাগুলো বড় হতে থাকে। এক বছরের মধ্যেই ওই গাছে ফুল দেখা দেয় এবং প্রচুর ফলন হয়। তার মধ্যে পাঁচটি গাছ মারা গেছে। বর্তমানে ১০০টি গাছ আছে। প্রতিটি গাছেই প্রথম বছরেই ৮ থেকে ১০ কেজি ফলন হয়। ইতোমধ্যে প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বলসুন্দরী কুল বিক্রি করেছেন। আরও ৫০ হাজার টাকার ফল এখনও গাছে রয়েছে। এ গাছগুলোতে আরও বেশি ফলন হবে। টানা ৪-৫ বছর এ গাছগুলো পরিচর্যার মাধ্যমে প্রচুর ফল দেবে। গাছের কলম করে প্রতিটি চারা ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। এছাড়া ওই একই জমিতে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে বেগুন, মুলা, বরবটি, পোটকা মরিচসহ নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তার পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ২০ হাজার টাকারও অধিক সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন। বিষমুক্ত হওয়ার কারণে তার সবজির বেশ চাহিদা রয়েছে।
কুলগাছে বাদুর ও পোকামাকড় যেন আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য বিশালাকার জাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। এছাড়া বলসুন্দরী কুল ও সবজিগাছে যখন ফুল আসে, তখন তিনি ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটিয়ে দেন। সকাল-সন্ধ্যায় তিনি নিজেই তার ফসলের পরিচর্যা করেন। এছাড়া তার বড় ছেলে আশরাফুল তাকে সময় সময় সহযোগিতা করে থাকে।
আছমত আলী জানান, বলসুন্দরী (কুল) চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। বলসুন্দরী কুল বেশ মিষ্টি ও পুষ্টিকর। একই জমিতে সবজি লাগিয়ে খেয়ে ও বিক্রি করে তিনি অত্যন্ত খুশি। নতুন করে আরও কিছু জমি ইজারা নিতে পারলে তিনি বাগান সম্প্রসারিত করবেন। কুল চাষের পাশাপাশি তিনি আরও প্রায় আড়াই একর জমি ইজারা নিয়ে নানাজাতের সবজি চাষ করে আসছেন। জমির মালিককে প্রতি একর জমির জন্য তিন হাজার টাকা ইজারামূল্য পরিশোধ করতে হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার উচ্চমূল্যের ফসল চাষের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে কারণে স্থানীয় কৃষি বিভাগও নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষক আছমত আলীকে। বলসুন্দরী কুল সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে বেশ সহায়ক হবে।
আছমতের কুল চাষের সাফল্যের কথা শুনে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান সরেজমিন পরিদর্শন করে খুব খুশি হন। তিনি তার বাগান থেকে কুল ক্রয় করে নিয়ে যান।