সারা দেশের মতো ফরিদপুরে বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং না থাকায় ক্রেতাদের কাছ থেকে দোকানদাররা ইচ্ছেমতো বেশি দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন তেল।
এর ফলে নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। শনিবার যেখানে তেলের দাম লিটার প্রতি ১৬৮-১৭৫ টাকা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। বাজারে এসে নাভিশ্বাস ওঠা ভোক্তারা বলছেন, বাজার তদারকি শক্ত না হলে থামবে না ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর প্রবণতা।
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির আশায় ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে যার কাছে যে তেল রয়েছে তা দোকান থেকে সরিয়ে অন্যত্র মজুত করে রেখেছে। যে কারণে ক্রেতারা সয়াবিন তেল কিনতে পারছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ।
জানা গেছে, সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা করে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৩ টাকা এবং পাম তেলের লিটার প্রতি ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম এখন কেউ মানছে না। এদিকে বাজারে পাম অয়েল তেমন দেখা যায় না, সিংহভাগই সয়াবিন তেল। বস্তুত অধিকাংশ পাম অয়েল বিক্রি হয় সয়াবিনের নামে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েল মিশিয়ে সয়াবিন তেল নামে বিক্রি করছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের নির্দিষ্ট কোনো দাম নেই দোকানগুলোতে। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কোথাও এই দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। একেক দোকানে একেক রকম দাম নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ ১৮০ টাকায় এক লিটার তেল বেচলেও, অনেকেই তার দাম নিচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা।
ক্রেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “চার-পাঁচ দিন আগেও লিটার প্রতি তেল ১৭০ টাকা দরে কিনেছি। এখন কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকায়। দোকানি আর আড়তদারদের কাছে যা মজুত আছে, সেগুলোর দাম বাড়িয়ে আমাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছে।”
ক্রেতা ইসলাম বলেন, “প্রতিটি দোকানে সয়াবিন তেল রয়েছে। কিন্তু কেউ বিক্রি করছে না। কেউ দাম বাড়িয়ে বললে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। আমি ১৬৮ টাকার লিটারের তেল ২০০ টাকা করে দুই লিটার কিনেছি।”
সীমা নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, “সরকার শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলে হবে না। বাজারও মনিটরিং করতে হবে। তাহলে আর ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে পারবে না।”
তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার দিয়েও তারা সময়মতো তেল পাচ্ছেন না। বোতলজাত তেলের সরবরাহও বন্ধ। তাই দাম বাড়ছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মিল থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক রায় বলেন, “কোনো দোকানি যদি বাড়তি লাভের আশায় সয়াবিন তেল মজুত করেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের প্রতিদিন বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলমান। সেখানে জেলা নিরাপদ খাদ্য, ভোক্তা অধিকার ও মার্কেটিং কর্মকর্তারা রয়েছেন।”
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ জানান, যারা বেশি দামে বিক্রি করছে তাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় এনে জরিমানা করা হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে অধিদপ্তরের অভিযান চলছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে।