• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২১, ০৯:৫৩ পিএম
ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমে ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাথমিক তথ্যমতে জেলায় চলতি মৌসুমের ২০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

দেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুর। চলতি মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) এ জেলায় আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক জমিতে। চাষীরা এখন ক্ষেত থেকে সেই পেঁয়াজ ঘরে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুইদিন টানা বৃষ্টিতে এখন মাথায় হাত তাদের।

জেলা সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত। চাষীরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ ৪০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ ক্ষেত থেকে চাষীরা আগামী সপ্তাহ খানিকের (৭ দিনের মধ্যে) পেঁয়াজ তোলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় নামতে পারছেন না চাষী।

জেলায় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ নয়, ক্ষেত তলিয়েছে রসুন, আলু ও সরিষার। আকস্মিক বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু ক্ষেতের ডুবে যাওয়ায় গাছে পঁচন শুরু হবে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া জন্য অন্য ফসলের প্রণোদনা দিতে।”

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেশি, হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতে তাদের (চাষিদের) আর্থিক ক্ষতি হবে অনেক। আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখতে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের খলিল মণ্ডলের মাঠে গিয়ে কথা হয় চাষী সুরত খান, সালাউদ্দিন মোল্ল্যাসহ কয়েকজন চাষী বলেন, “ভাবতে পারিনি এসময় এভাবে বৃষ্টি হবে। এখন পেঁয়াজ ঘরে তোলা সময়, কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ক্ষেতে পানি জমে গেছে। চলতি মৌসুমে মাঠে যে ফসল আছে সবই ক্ষতির মধ্যে। কিভাবে চলব, আর পুঁজি উঠবে কি ভাবে, সেই চিন্তায় দিশেহারা আমরা।”

চাষীরা আরও বলেন, “শুধু পেঁয়াজ নয়, অন্য ফসলেও সর্বনাশ হয়েছে। আমাদের দেখার কেউ নেই।

জেলার নগরকান্দা উপজেলা পেঁয়াজ উৎপাদনে অন্যতম। এই উপজেলার আশফরদী গ্রামের পেঁয়াজ চাষী রোকন উদ্দীন মাতুব্বর বলেন, “আমি প্রতি বছর ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করি। তাই এবছর সেই জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ১৪ কেজি দানা কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বৃষ্টিতে সব শেষ। এখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হয়েছে তাই সরকারের নিকট আমাদের বীজ কিনে দেয়ার দাবি জানাই।”

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন ইয়ামিন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে নগরকান্দা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে আমাদের উপ-সহকারীরা মাঠে আছেন। আমরা চাষীদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশা করছি সরকার এই চাষীদের বিষয়ে আন্তরিক হবে।”

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, “ইতিমধ্যে আমাদের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য। আমরা চুড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানার পর তাদের আর্থিক সহয়তাসহ সরকারি অনান্যে সহযোগিতা করব।”

Link copied!