পিঁপড়ার ডিমে চলে সংসার


সুজন সেন, শেরপুর
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১, ০৮:২৮ এএম
পিঁপড়ার ডিমে চলে সংসার

ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা শেরপুরের গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের ছোট গজনী এলাকায় সম্প্রতি দেখা যায়, একটা লম্বা বাঁশের মাথায় ডালি বেঁধে এক যুবক গাছে গাছে কী যেন খুঁজছেন। তার কাছে গিয়ে জানা গেলো, তিনি ডোল পিঁপড়ার বাসা খুঁজে খুঁজে সেই বাসা থেকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন।

পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী ঐ যুবকের নাম বিজয় সাংমা (১৮)। বিজয় সাংমার বাড়ি পাহাড়েই। শুধু বিজয় নয়, এ রকম আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আছেন। তারা ডোল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এ দিয়েই চলে তাদের সংসার।

সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বড় গাছ থেকে ডোল পিঁপড়ার বাসা ও ডিম সংগ্রহ করা অনেক আগে থেকে চলে আসলেও এখন তা আয়ের উৎস হয়েছে। 

ডিম সংগ্রহকারী টেমাল সাংমা বলেন, “আমরা তো পাহাড়ের মানুষ, আমগোর বাপ-মা অনেক কষ্ট কইরা সংসার চালাইতো। এহন বাপে (বাবা) অসুখে পড়ছে। আমগোর এহানের ১০ থেকে ১৫ জন পাহাড়ের গাছ-গাছালি থাইক্কা পিঁপড়ার ডিম পাইড়্যা (সংগ্রহ) বেঁইচ্যা টেহা (টাকা) কামাই (আয়) করে। আমিও তাদের দেহা-দেহি পিঁপড়ার ডিম পাইড়্যা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টেহা কামাই করি। ঐ টেহা দিয়েই সংসার চলে আমগোর।”

ডিম সংগ্রহকারী নিরঞ্জনের ভাষ্য মতে, পাহাড়ে সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছগুলোতে ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পাড়ে। বড় বাসা থেকে একশ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। 

তারা আরও জানান, যখন মাছ শিকারের ধুম পড়ে যায় তখন প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম হাজার টাকার বেশি দামেও বিক্রি যায়। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষ দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৈত্র-বৈশাখ মাসের গরমে পিঁপড়ার ডিম বেশি ফোটে। এ সময়ই খাল-বিলে বেশি মাছ ধরে মানুষ। তাই এ সময়টাতে ডিমের চাহিদা বেশি। বড়শি-ছিপ দিয়ে মাছ ধরার টোপ বা আধার হিসেবে পিঁপড়ার ডিম বড়শিতে গেঁথে ব্যবহার করা হয়। তাই মাছ শিকারীদের কাছে পিঁপড়ার ডিমের অনেক চাহিদা। বর্তমানে ১ কেজি পিঁপড়ার ডিম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মাছ শিকারি ছাইফুল ইসলাম ছাকিম জানান, পিঁপড়ার ডিম টোপ হিসেবে ব্যবহার করলে বেশি মাছ পাওয়া যায়। পিঁপড়ার ডিম মাছের খুব পছন্দের খাবার।

ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া এলাকার পিঁপড়ার ডিম ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক বলেন, বাকাকুড়া, রাংটিয়া, গজনী, নকশির কয়েকজনের কাছে পিঁপড়ার ডিম পাইকারি মূল্যে কিনে রাখেন। পরে মাছ শিকারি ও শেরপুরের বিভিন্ন দোকানেও পাইকারি বিক্রি করেন। অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ ব্যবসা থেকেও আয় হয়ে থাকে। দিনে ৫ থেকে ১০ কেজি ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানান তিনি।

Link copied!