পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক রোস্তম আলীর নামে পঞ্চাশ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ড. আওয়াল কবির জয়।
পাবনার আমলি আদালত-১ এ সশরীরে উপস্থিত হয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দণ্ডবিধির আইনের ধারা ৫০০ মোতাবেক মামলাটি দায়ের করেন তিনি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আবদুল আজিজ (১) ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাদীর আরজি সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী পাবিপ্রবির উপাচার্য থাকাকালে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ড. আওয়াল কবির জয়কে রেজিস্ট্রার কর্তৃক চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর পরে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রবেশ করতে বাধা দেন। কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্ত কমিটির নামে নানাভাবে হয়রানি করেন এবং দীর্ঘ সময় তার রিপোর্ট না দিয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান।
এতে ড. আওয়াল কবির জয়ের সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং প্রশাসনিক সম্মানহানি এবং সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই সাবেক উপাচার্য রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন আওয়াল কবির জয়।
অভিযুক্ত রোস্তম আলী উপাচার্য পদে আসীন থাকায় বাদীর গুরুতর ক্ষতি করতে পারে বিধায় মামলা করতে বিলম্ব হলো। শুনানি শেষে আদালত মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
আওয়াল কবির জয় বলেন, “উপাচার্য রোস্তম আলী ক্ষমতার অবব্যহার করে ভুয়া সব অভিযোগ তুলে আমাকে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ঢুকতে দেননি এবং কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত রেখে আমার ব্যক্তিগত, চাকরি, এবং সামাজিক ক্ষতি করেছেন। আশা করি আদালতে ন্যায় বিচার পাব।”
তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি মামলার রেকর্ড হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “বিজ্ঞ আদালত মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন। আমরা বিশ্বাস বাদি ন্যায় বিচার পাবেন।”
এ বিষয়ে পাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য রোস্তম আলীকে ফোন দেওয়া হলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।
রোস্তম আলী উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার, একাডেমিক-প্রশাসনিক আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ইউজিসির তদন্তে নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তিনি অনেক টাকা ফেরত দেন। তার অদক্ষতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ তার মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষের আগে গণনিয়োগ আয়োজন করেন এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে সভা বাতিল করে পুলিশ পাহারায় রাতের অন্ধকারে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। অনৈতিকভাবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন নিজের ভাতিজি কানিছ ফাতিমা (সেকশন অফিসার), ভাগিনা হাসিবুর রহমানসহ (অফিস সহকারী) অনেককে।
রোস্তম আলী নিয়োগ বাণিজ্য ও গণনিয়োগ বন্ধ করতে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং বিদায় বেলায় ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেন। রোস্তম আলীর অনিয়ম, ক্ষমতার অবব্যবহারের প্রতিবাদ এবং নানা দাবিতে গত প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে উপাচার্য, উপ-উপচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সৃষ্টি হয়েছে নানা সঙ্কট।