পাবনার চাটমোহরে ৩টি ইউনিয়নে আলাদা নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে প্রতিপক্ষের নির্বাচনী অফিস ও একাধিক মোটরসাইকেল।
উপজেলার গুনাইগাছা, হরিপুর ও পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে তিনজনকে আটক ও ২টি মোটরসাইকেল জব্দ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী রজব আলী বাবলুর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া ছাড়াও দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলামের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস) চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্যরা গ্রামের মধ্যে ও স্থানীয় বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
এ সময় ১৫/২০টি মোটরসাইকেলযোগে হেলমেট পরিহিত যুবকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী রজব আলী বাবলুকে মারধর করে এবং জীবননগর ও চরপাড়া বাজারে আনারস প্রার্থীর সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর ও মারপিট করে। এ সময় লোকজন বেরিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। চরপাড়ায় রায়হান ও সোলেমানের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রজব আলীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ২টি মোটরসাইকেল।
আহতরা হলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস) রজব আলী বাবলু (৫৫), চরপাড়া গ্রামের রায়হান আলী (৩০), জালেশ্বর গ্রামের বাবু হোসেন (৩০), চরপাড়া গ্রামের মনসুর আলী (৩৫), সাইফুল ইসলাম (২০), আলাল হোসেন (৪৫), আক্কাস বিশ্বাস (৫৫), বড়শালিখা গ্রামের রজব আলী (৫৮) ও গুনাইগাছা গ্রামের ইসরাইল হোসেন (৫৬)।
চেয়ারম্যান প্রার্থী রজব আলী বাবলু অভিযোগ করে বলেন, “আমার সমর্থকদের নিয়ে ভোট চাইতে গেলে নৌকার লোকজন আমার উপর হামলা চালায়। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করে। এ সময় আমার অনেক সমর্থক আহত হয়। চরপাড়ায় আমার সমর্থকদের দোকানপাট ভাঙচুর করেছে।”
রজব আলী বাবলু বলেন, “নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আশঙ্কায় হামলা ও ভাঙচুরের পথ বেছে নিয়েছে। আমাকে বিভিন্নভাবে সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি শঙ্কার মধ্যে আছি।”
তবে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমার লোকজন হামলা করেনি। অন্য কেউ হয়তো বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজনের উপর হামলা করেছে।”
তিনি উল্টো দাবি করেন, নৌকার কর্মীদের মারপিট করা হয়েছে।
এদিকে একইদিন রাত ৮টার দিকে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ও চড়ইকোল বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ছুরিকাঘাতে তিনজনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২টি নির্বাচনী অফিস ও ৫টি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ নিয়ে উভয় প্রার্থীর কাছ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন দাবি করেন, তার কর্মীরা ভোট চাইতে বের হলে হরিপুর বাজারে আনারসের অফিস থেকে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে তিনজনসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাতে নানা রকম ধারালো অস্ত্র ছিল। নৌকার আহত কর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক আফজাল হোসেন বলেন, নৌকার কর্মী-সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে আমার দুটি নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। নৌকার লোকজনের হামলায় আমার ৩/৪ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিতে পারছি না। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আশঙ্কায় হামলা ও ভাঙচুরের পথ বেছে নিয়েছে। এদিকে ওই ইউনিয়নের চড়ইকোল বাজারেও দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে, উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও মারপিটের অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ওই ইউনিয়নের জামালপুর ও আলমনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল করিম তারেক মঙ্গলবার রিটার্নিং অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, হামলা ও মারপিটের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তির কথা শুনেছি। এলাকায় পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ২টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। আইনগত ব্যরস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আগামী ২৮ নভেম্বর চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।