ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের পর্যটন কেন্দ্র তাড়ুয়া সৈকতে অবৈধভাবে খুঁটিজাল দিয়ে মাছ ধরছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই জালে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ ধরা পড়েছে। পাশাপাশি জালে আটকা পড়েছে অতিথি পাখি। এতে একদিকে যেমন মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, খুঁটিজালে মাছ ধরা অবৈধ। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত আছে।
সরেজমিনে ভোলা শহর থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে তাড়ুয়া দ্বীপে গিয়ে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদাবালি আর লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি। পাশাপাশি দেখা মিলবে সমুদ্রের নোনা জল, ম্যানগ্রোভ বন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি কেওড়া বাগান। শীত মৌসুমে সৈকতে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কোলাহল, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত মানুষ তাড়ুয়ায় আসেন।
কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় অসাধু কিছু জেলে তাড়ুয়ার সৈকতসহ আশপাশের চরগুলোতে মাইলের পর মাইল এলাকায় বিছিয়ে দিয়েছেন খুঁটি জাল। এতে একদিকে জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত তাড়ুয়া সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে পর্যটকদের চলাচল। পাশাপাশি ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি এবং নদী ও সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ।
ওই দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, তাড়ুয়ার দ্বীপের নয়নাভিরাম অপরূপ চিত্র দেখতে তারা সেখানে ঘুরতে এসে খুঁটি জাল বিছানোর কারণে অবাধে চলাচলে অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
তারা আরও জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থেকে স্থানীয় জেলে আবু তাহের, শফি মাঝি, আকবর, মান্নানসহ কিছু অসাধু জেলে তাড়ুয়ার দ্বীপের কয়েক মাইল জুড়ে বিছিয়ে রেখেছে অবৈধ খুঁটি জাল। এতে ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি ও মাছ। ওই জালে আটকে পড়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অতিথি পাখি মারা গেছে। খুঁটি জালের ভয়ে ওই দ্বীপে এখন পাখির সংখ্যাও অনেক কমে আসছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে তাড়ুয়ার দ্বীপ থেকে সম্প্রতি ঘুরতে আসা পর্যটক উত্তম বিশ্বাস ও গোপাল সাহা জানান, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদে কিছু অসাধু জেলে তাড়ুয়ার সৈকতে মাইলের পর মাইল খুঁটি জাল ফেলে ওই দ্বীপের পরিবেশ যেমন বিনষ্ট করছে, তেমনি অবৈধভাবে খুঁটি জাল ফেলে রাখার কারণে ধরা পড়ছে অতিথি পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া তাড়ুয়া সৈকতের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বিবি মরিয়ম বলেন, “চেয়ারম্যান ছালাম হাওলাদারের ওয়ার্ডারে পুরা গাঙে জাইল্যারা খুডা জাল দিয়া মাছ ধরে। জোয়ারে মাছ আটকাইলে ভাডার সময় আতাইয়া মাছ ধরে।”
আরেক বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, “এলাকার চেয়ারম্যান জেলেগোরে দাদন দেয়। আর জাইল্যারা মাছ ধইর্যা চেয়ারম্যানের মাছের গদিতে দেয়। চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া এলাকায় কিছু হয় না।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে খুঁটি জালের মালিক জেলে আবু তাহের বলেন, “খুটা জাল অবৈধ না। এটা সব জায়গায় চলে। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সবাই জানে। তারা কিছু বলে না।“
এ ব্যাপারে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. ছালাম হাওলাদার বলেন, “এখানে জেলেরা খুটা জাল ফেললেও আমি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করবো। তবে, এ জালে রাতের অন্ধকারে ২-১ টা পাখি আটকা পড়লেও তেমন কোন ক্ষতি হয় না।”
চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, নদীগুলোতে খুঁটি জালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তাড়ুয়ার দ্বীপে এ ধরনের অবৈধ কোনো খুঁটি জাল ফেললে সেগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে ভোলা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এম এ কায়সার বলেন, “সেখানে আমরা এর আগেও অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন পাখি চোরদের ধরেছি। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।”