ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস (রক্ত পরিশোধন) সেন্টার আড়াই মাস ধরে বন্ধ। শহরের মাত্র ৪টি বেসরকারি ক্লিনিকে সেবাটি চালু থাকলেও প্রচুর ব্যয়বহুল হওয়ায় চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েন অনেক হতদরিদ্র মধ্য ও নিম্নবিত্ত রোগী।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলাসহ আশেপাশের খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ চার জেলার মানুষের একমাত্র ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। তাই রোগীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ৬ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করে কর্তৃপক্ষ। পরে চাহিদা বাড়ায় ধীরে ধীরে উন্নতি করে ১০ শয্যা করা হয়। তিনভাগে প্রতিদিন ৩০ জন রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হতো। পাশাপাশি একজন কনসালটেন্টসহ দুজন মেডিকেল অফিসারের অধীনে ৯ জন নার্স শিফট অনুযায়ী কর্মরত ছিলেন সেন্টারে। কিন্তু শুধুমাত্র ক্যামিকেল রিএজেন্ট না থাকায় বর্তমানে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, “গত দুবছর ধরে সেবা দিয়ে আসছিলাম। এতে অনেক গরীব, অসহায়, দুস্থ, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত রোগীরা এখানে স্বল্পমূল্যে সেবা পেতেন। যেটি বেসরকারিভাবে অনেক খরচ পড়ে। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে বর্তমানে সেন্টারটি বন্ধ রয়েছে।”
সেবা নিতে আসা স্থানীয় ফখরুল ইসলাম জানান, হাসাপাতালের রক্ত পরিশোধন সেবাটি বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। তার বাবার কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। এখন উনাকে সাপ্তাহে দুবার বাধ্যতামূলক রক্ত পরিশোধন করাতে হয়। সরকারি হাসপাতালে খরচ কম, তাই কবে খুলবে সেন্টারটি সে খবর জানতে বারবার হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি।
আশরাফ হোসেন নামে এক রোগীর স্বজন জানান, সরকারি হিসেবের তুলানায় ডায়ালাইসিস খরচ বেসরকারি হাসপাতালে ৫-৬ গুণ বেশি করতে হয়। এখন এতো খরচ কিভাবে মেটাবেন তা নিয়ে চিন্তিত। তার দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা বন্ধ রাখার ফলে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, পাশাপাশি ভোগান্তি।
এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জয়দেব সাহা বলেন, “কিডনি রোগীদের গড়ে সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস বাধ্যতামূলক। এটি বাধাগ্রস্ত হলে অনেক বড় বিপদ। যেটি কখনো কাম্য না। আর কিডনি এবং রক্ত পরিশোধন করা না গেলে হার্টএ্যাটাক বা ব্রেনস্ট্রোক হতে পারে।”
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, দ্রুত সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে। জেলা ভিত্তিক জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেন্টারে ক্যামিকেল রিএজেন্ট বা জনবলও দেওয়ার কোনো খাত নেই। তবু তারা খাত তৈরি করে অন্যস্থানের জনবল এ সেন্টারে কাজে লাগাচ্ছেন, শুধু মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে। এখন রিএজেন্ট আনার চেষ্টা চলছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালিও চলছে।”