• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পেঁয়াজক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২১, ০৭:৪৬ পিএম
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পেঁয়াজক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পাবনায় আমন ধান, পেঁয়াজ, শীতকালীন নানা সবজি ও কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবেই মাটিতে নুয়ে পড়ে পাকা আমন ধান। মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে যায় ভেসে। বিশেষ করে পেঁয়াজ খ্যাত এ জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় শতশত একর জমির পেঁয়াজের বীজে পচন ধরে নষ্টের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মূলকাটা পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের বীজতলা (দানা) থেকে যে পোয়াল/বেচন(বীজ/ চারা) ফলানো হয়। শত শত বিঘা জমির বেচন এখন দুদিনের টানা বৃষ্টির পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই পেঁয়াজ চাষিরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই বীজ বাঁচানো না গেলে পেঁয়াজ উৎপাদনে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। দেশের চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খ্যাত পাবনা। এ জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার হাজার হাজার একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যে তৈরি বীজ নষ্ট হয়ে গেলে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে মারাত্বভাবে বিঘ্নিত হবে। যদি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হয়, তবে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জেলার সব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠে পাকা ধানের জমিতে পানি জমে গেছে এবং মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। এখন সেই ধান ঘরে তুলতে চরমভাবে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকের। বিনষ্ট হয়েছে সবজি খ্যাত পাবনা অঞ্চলের শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।

পাবনা সদর উপজেলার মাহমুদপুর-বেরুয়ান এলাকার কৃষক আবুল বাশার বলেন, “আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। সব মাঠে পানিবদ্ধতার কারণে পাকা ধান কাটা খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়েছে কৃষক। বিভিন্ন উপজেলাতে একই অবস্থা বলে স্থানীয়রা জানান। এটা বড় ধরনের একটা ধাক্কা বলে অভিহিত করছেন ভূক্তভোগী কৃষকরা।”

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পাবনার বিভিন্ন স্থানে ফসল, শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতির খবর আসছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে পরিদর্শন করা হয়েছে। তেমন ক্ষতি হয়নি দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, চারা পেঁয়াজের মাঠে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য পদ্ধতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। গম ও সরিষা চাষে এই বৃষ্টি বেশ উপযোগী দাবি করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

এদিকে টানা ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জেলার ইটভাটার তৈরিকৃত কাঁচা ইটের। টানা দু’দিনের অসময়ের বৃষ্টিতে তিন কোটিরও বেশি কাঁচা ইট পানির সঙ্গে মিশে ভেসে গেছে বলে সমিতির নেতারা জানিয়েছেন।

পাবনা জেলা ইউভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে জেলায় টানা দুদিনের বৃষ্টিতে জেলার নয় উপজেলায় তিন কোটিরও বেশি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কাঁচা ইট গলে পানির সঙ্গে মিশে গেছে।

পাবনার সুজানগরের ইটভাটাগুলোর বিপুল পরিমাণ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কমপক্ষে ২ কোটি টাকা মূল্যের  কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভাটার মালিকেরা। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী এ তথ্য জানা। সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সমিতির তালিকাভূক্ত ১৫টি ইটভাটার সবগুলোতেই বৃষ্টিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলার বেশ কয়েকটি ইট ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী জানান, প্রায় সব ইটভাটা মালিকরা ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। তাদের ঋণসহ লাভের টাকা যথাযথই ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ইটভাটার মালিকরা।

Link copied!