• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

গুমরে কাঁদছে শহীদ মিনার, নেই শ্রদ্ধা ও যত্ন


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ০৯:০৩ পিএম
গুমরে কাঁদছে শহীদ মিনার, নেই শ্রদ্ধা ও যত্ন

জঙ্গলে ঘেরা পরিত্যক্ত একটি শহীদ মিনার। যে মিনার মনে করিয়ে দেয় ভাষার কথা। ভাষার জন্য জীবন দেবার কথা। মনে করিয়ে দেয় ভাষা আন্দোলনের এক গৌরবময় ইতিহাসের কথা।

যে মিনারে একসময় ভাষা শহীদদের স্মরণে চোখর জল পড়েছে তা আজ পরিত্যক্ত। জঙ্গল আজ আঁকড়ে ধরেছে। মিনারটি নিজেই আজ গুমরে কাঁদছে।

এই শহীদ মিনারটি ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজের। মিনারটি কলেজ ক্যাম্পাসের পশ্চিমের এক কোণে থাকায় তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে ছাত্রীদের কমনরুমের সঙ্গেই নতুন করে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে পুরাতন শহীদ মিনারটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও তার প্রতি আর কোনো সম্মান বা শ্রদ্ধা কাজ করে না কলেজ কর্তৃপক্ষের।

শুধু তাই নয় মিনারটির পাশে বাউন্ডারি সংলগ্ন প্রধান সড়কে রয়েছে একটি খাবার হোটেল। হোটেলের যত ময়লা আবর্জনা তার সবই ফেলা হয় এই মিনারের পাদদেশে। যে মিনারের পাদদেশে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো সেখানে আজ ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়।

ফরিদপুর শহরের টেপাখোলায় অবস্থিত সরকারি ইয়াছিন কলেজ। এ এলাকার প্রবল শিক্ষানুরাগী ইয়াছিন জমা‍দার জমি ও অর্থ দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় শিক্ষা বিস্তারের খুব স্বল্প সংখ্যক মুসলমানই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে এগিয়ে আসতেন। তাই ইয়াছিন জমাদারের মতো স্বল্প শিক্ষিত মানুষের পক্ষে এ ধরনের প্রয়াস ছিল সত্যই অকল্পনীয়।

ইয়াছিন মুসলিম হাইস্কুল সময়ের দাবিতে ১৯৬৮ সালে স্থানীয় জনগণ এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্যোগে ইয়াছিন কলেজে রূপান্তরিত হয়। যা ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ঘোষণার মধ্য দিয়ে আজকের সরকারি ইয়াছিন কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৯৯ সালে কলেজে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। ২০১২ সালে ছাত্রীদের কমনরুমের সামনে নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণের পর পুরাতনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের দারোয়ান মজিদ শেখ, প্রায় ৩০ বছর হলো তার চাকরির বয়স। মজিদ শেখ বলেন, “কলেজের গেটের সামনেই শহরের বৃহত্তম গরুহাট। প্রতি মঙ্গলবার হাটে আসা গরুব্যবসায়ীরা পরিত্যক্ত শহীদ মিনারের পাশে গিয়ে পায়খানা-প্রসাব করে।”

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফসর শীলা রানী মন্ডল বলেন, “পুরাতন শহীদ মিনারটি ছিল ভিন্ন ধরনের। আর তাছাড়া পুরাতন মিনারটি সামনে তিন তলা ভবন থাকায় তা ক্যাম্পাসের এক কোণে পড়ে গেছে। আর সেখানে নতুন ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। অচিরেই কাজ শুরু হবে। পুরাতন শহীদ মিনারের পরিবর্তে কমনরুমের পাশে নতুন আরেকটি তৈরি করা হয়েছে। তবে ভাষা দিবসটিকে ঘিরে আমাদের পরিকল্পনা আছে পুরাতন মিনারটিকে পরিষ্কার করে রঙ করার।”

Link copied!