★ ছয় শতাধিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক
★ সহকারী শিক্ষকের পদ খালি সাত শতাধিক
কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-সংকটে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে জেলার ছয় শতাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সাড়ে সাত শতাধিক সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ প্রশিক্ষণে আছেন। এতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে অন্য শিক্ষকদের। রয়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্বও। ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। শুধু গ্রামের বিদ্যালয়ে নয়, নগরীর নামকরা বিদ্যালয়গুলোতেও রয়েছে শিক্ষক-সংকট। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর ও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলার ১৪টি, সদর দক্ষিণে ১২টি, লালমাইতে ২৬টি, লাকসামে ১৪টি, মনোহরগঞ্জে ৫৩টি, চৌদ্দগ্রামে ৩৮টি, নাঙ্গলকোটে ৪৫টি, বরুড়ায় ১৪টি, চান্দিনায় ৫১টি, দেবিদ্বারে ৩৮টি, বুড়িচংয়ে ৪৬টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১৫টি, মুরাদনগরে ৪৩টি, দাউদকান্দিতে ৮৫টি, হোমনায় ৪৯টি, মেঘনায় ৪০টি, তিতাসে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, জেলার ২ হাজার ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৮৩২ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই নারী শিক্ষক। এর মধ্যে জেলার ৬০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৭৫৮ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক-সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর কোনো শিক্ষক (নারী-পুরুষ) যখন অসুস্থ হন কিংবা মাতৃত্বকালীন বা অন্য কোনো কারণে ছুটিতে থাকেন তখন দায়িত্বরতদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় একজন শিক্ষককে একটানা চার-পাঁচটি ক্লাসে পাঠদান করতে হয়, অথবা কখনো কোনো একটি শ্রেণির পাঠদান বন্ধ থাকে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষক সংকট রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কুমিল্লা শাখার সভাপতি ফয়জুন্নেছা সীমা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভিভাবকহীন। পদ শূন্য থাকায় প্রধান শিক্ষকের কাজ অন্য আরেকজন শিক্ষককে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে করতে হচ্ছে। দায়িত্বের কারণে পাঠদানের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সভা-সেমিনারে অংশ নেওয়াসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। এতে শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে শিক্ষক-সংকট নিরসনের বিকল্প নেই।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নতুন নিয়োগ হয়নি। নতুন নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি শুরু হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদ পূরণ হবে এবং সমস্যারও সমাধান হবে।’