লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তার পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে।
পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ১২ দিনের ব্যবধানে হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বসত-বাড়িহারা মানুষজনের কারও আশ্রয় মিলছে আত্মীয়স্বজনের জমিতে, কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন রাস্তায় আবার কেউ পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই রয়েছেন। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনে হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউনিয়নের তিস্তা চরের চিলমারীপাড়া গ্রামটির কোনো অস্তিত্ব নেই। চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি। প্রচণ্ড স্রোতে এককের পর এক ভাঙছে বাড়ি। চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারগুলো। এদিকে প্রবল স্রোতে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে অনেকের। আবার কেউ নৌকায় করে তাদের ঘরবাড়ি-আসবাব সরিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। হুমকি মুখে পড়েছে জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লিনিক, মসজিদ ও মাদ্রাসা।
পানিবন্দী ও ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো জানায়, গত কয়েক দিন পানিবন্দী থাকার পর শুরু হয় তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরাতে থাকি। এর মধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি প্রবল স্রোতে ভেসে যায়।
ভাঙনকবলিত সাদেকুল ইসলাম (২৬) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “১৫ দিন আগেও আমার বসতভিটা ও ফসলি জমি ছিল আজ সব নদীতে বিলীন। চারদিকে পানি আর পানি। এখন পরিবার নিয়া মানুষের বাড়িতে আশ্রায় নিয়ে আছি। এখন ঘর করে কই থাকব তারও জায়গা নেই। বৃদ্ধা মা ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে কই যাব কী খাব, তা একমাত্র আল্লাহ জানে।”
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা মোবারক হোসেন (৬০) বলেন, “কয়দিন আগোত হামার বাড়ি আছিল, ঘর আছিল, সংসার আছিল আর আছিল আবাদি জমি ও ফলের বাগান। এ্যালা আর হামার কিছুই নাই। এ্যালা যে পরিবার নিয়া কোনটে যাইম কাহো জানে না।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগানসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ক্লিনিক ও মসজিদ ও মাদ্রাসা।
হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, “আমার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার প্রায় ৩০০ পরিবার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলোর অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসক পরিদর্শন করেছেন। এই তিস্তাপারের মানুষের মৌলিক দাবি একটাই তিস্তার বাঁ তীরে বাঁধ চাই।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কোথাও কোথাও তীব্র আকার ধারণ করছে। ঝূঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি জিও ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।”
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর জন্য ২১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য মজুত রয়েছে। তালিকা করে শিগগিরই বিতরণ শুরু হবে। ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করছে।