• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ধর্ষণের ঘটনায় আতঙ্ক সর্বমহলে

এক ধর্ষক ধর্ষিতা পর্যটকের পূর্বপরিচিত: পুলিশ


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১, ০৭:২৬ পিএম
এক ধর্ষক ধর্ষিতা পর্যটকের পূর্বপরিচিত: পুলিশ

ধর্ষককারীদের মধ্যে একজন পূর্বপরিচিত বলে জানিয়েছেন ধর্ষিতা নারী পর্যটক। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই নারী এ কথা বলেছেন।

এ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই নারী ও তার স্বামী বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে আছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, “ওই নারীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের পাশাপাশি প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার (নারীর) পূর্বপরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন।”

আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, ১৬ মামলার আসামি, মাদকসেবক ও মাদক ব্যবসায়ী একজন মানুষের (আশিকের) সঙ্গে বাইরের আরেকজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

জিললুর রহমান আরও বলেন, “আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “আড়াই মাসে ওই নারী বেশ কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন। তার স্বামীর টাকাপয়সা, মুঠোফোন চুরি হয়ে গেছে। দেড় থেকে দুই মাস আগে ওই নারী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বলেছিলেন, তিনি (নারী) বিপদে পড়েছেন, আক্রমণের শিকার হতে পারেন, তাই তার সাহায্য দরকার।”

কিন্তু স্থানীয় পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়নি বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরও বলেন, “তখন ওই দম্পতিকে চলে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা চলে না গিয়ে এখানে অবস্থান করেন। কেন অবস্থান করছেন, কারও সঙ্গে তাদের শত্রুতা আছে কি না, এসব সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।”

দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

এ ঘটনার পর কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বমহলে। সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবছে অনেকে।

ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িতদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

র‌্যাব বলছে, তারা দুইজনকে শনাক্ত করেছে। এখনও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এর মধ্যে একজন শহরের বাহারছড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে আরিফুল ইসলাম আশিক, অপরজন তার সহযোগী ইস্রাফিল হুদা জয়। 

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। আশিকুল ইসলামসহ এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল খুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন। এর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনকে বুধবার রাতে আটক করে র‍্যাব। ঘটনার পর থেকে মামলার অন্য আসামিরা আত্মগোপনে আছেন। সন্ত্রাসী আশিকের সঙ্গে রিয়াজের চেনাজানা ও বন্ধুত্ব রয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে শহরের বাহারছড়ার বাড়িতে গিয়ে আশিককে পাওয়া যায়নি।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ওই নারী কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। বিকেলে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে ওই নারী সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে সন্ধ্যায় ওই নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন ওই নারীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, তা নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়।

পরে ওই নারী এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি বিষয়টি র‍্যাবকে জানান। পরে র‍্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।

শহরের বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূলহোতা আশিক। তার নেতৃত্বে রয়েছে ৩২ জনের একটি অপরাধী চক্র। সবাই তাদের চেনে। আশিক বড় ধরনের অপরাধী। তারা একেকজন একেকভাবে বিভক্ত হয়ে আবার কখনও দুই-তিনজন দলভুক্ত হয়ে শহরের অলিগলিতে চুরি, ছিনতাই ও খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়। পর্যটকদের তেমন কোনো নিরাপত্তা নেই। তবে অভিযোগ পেলে ট্যুরিস্ট পুলিশ আসে।

আশিকের মা ও ছোট ভাই বাবুল বলেন, “বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশিক বাসায় এসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর একটি ফোন পেয়ে আবার বেরিয়ে যান। এর পর থেকে আর বাড়িতে ফেরেননি।”

পুলিশ ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আরিফুল ইসলাম আশিক ও তার সহযোগী আব্দুর রহমান জয় ছিনতাইকারী। আশিকের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। তার সহযোগীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে দুজন।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারের গুড ভাইব কটেজ নামে একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলিয়ান এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই সময়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ওই নারী রক্ষা পান। এ ঘটনায় রিসোর্টের দুইজন কর্মচারীকে আটক করেছিল পুলিশ। তারা হলো রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ এলাকার কলিম উল্লাহর ছেলে আনসার উল্লাহ (২৪) ও আবদুল মুনাফের ছেলে আবদুল গফুর (২০)। পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়।

Link copied!