• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল জুড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২, ০৮:৫৪ পিএম
উপকূল জুড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি

বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমি ৬৬ শতাংশ থেকে বর্তমান সময়ে ৬০ শতাংশে নেমে আসার পরও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের নেতারা বলেছেন, “দেশের উপকূল জুড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত রয়েছে।”

৭২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৯টি জেলার ১ কোটি অধিবাসী এই বঞ্চনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে নেতারা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতে পারে। কেবল আউশ, আমন ও বোরো ধান উৎপাদনই নয়, দেশজুড়ে সব ধরনের কৃষিখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উপকূলের জলাবদ্ধতা হ্রাস এবং লবণাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে এ উৎপাদন আরও বেড়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।” 

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা পাবলিক মিলনায়তনে কৃষি ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির। এসময় ঢাকা থেকে আসা কৃষি ফোরামের সঙ্গে সংযুক্ত হন সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, মোস্তাফিজ, কাবেরী মৈয়ত্র, সাঈদ শাহীন প্রমুখ। 

তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে কৃষি সাংবাদিক নেতারা বলেন, বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এক, দুই ও তিন ফসলি চাষাবাদ করার কারণে। এমনকি জমির বহুমুখী ব্যবহারও এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক শক্তির কাজ করেছে। আবাদযোগ্য ৭৫ শতাংশ জমিতে এভাবে বহুমুখী এবং মিশ্র চাষ করে উপকূলে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

দেশে এখন ৪৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, উপকূল অঞ্চলে সচরাচর লবণাক্ততার মাত্রা ছিল ৭ থেকে ৮ পিপিটি। বর্তমান সময়ের শুষ্ক মৌসুমে তা ১৮/১৯ পিপিটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিনাসহ বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন ১২ থেকে ১৩ পিপিটি পর্যন্ত সম্ভব হলেও অন্যান্য উৎপাদন নানাভাবে মার খাচ্ছে।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন লবণাক্ততার কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় শুরু হয়েছে। নদী খালে পুকুরে নোনা পানি এবং জলাবদ্ধতার অবসান শেষে বিস্তীর্ণ এলাকা বালুকাময় হয়ে ওঠায় সেখানকার সবুজ বৃক্ষ সম্পদ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। সাজানো গাছপালা এবং ধানসহ অন্যান্য কৃষি খাদ্যপণ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার সঙ্গে যুদ্ধ করে লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এসবের পরও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এবং মনুষ্যসৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার কবল থেকে রক্ষা পেতে অভিযোজন প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তারা দেশের ৯ কোটি টন কৃষিপণ্য উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরেন।

বর্তমান সময়ে পরিবারপ্রতি গড়পরতা দশমিক ৮২ একর জমি রয়েছে জানিয়ে আয়োজকরা বলেন, গত পাঁচ দশকে ধান উৎপাদন বেড়ে এখন তা ১০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। এই উৎপাদন আরও বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা। 

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন, ইচ্ছা করলেই জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ কথা নয়। আর একারণে শুধুমাত্র ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভর না করে সাতক্ষীরার আম, উন্নত জাতের কুল, বহু ধরনের সবজি এবং অন্যান্য কৃষি ফসলের চাষ করে উপকূলের উৎপাদন বঞ্চনাকে অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষক ও কৃষিকাজে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। লবণাক্ত পানির চিংড়ি মাছ ছাড়াও মিষ্টি পানিতে অন্যান্য মৎস্য উৎপাদনে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

উন্মুক্ত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর রহমান, ৭১ টিভির বরুণ ব্যানার্জী প্রমুখ সাংবাদিক।

Link copied!