“মেয়েদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন... আপনাকে পাবনা ছাড়া করা মাত্র ১০ মিনিটের বিষয়” এভাবে পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি গালিগালাজ করেন জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহানকে।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন কানিজ আইরিন জাহান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এদিকে আজ বেলা আড়াইটায় নারী সংসদ সদস্য জলি জেলা প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগটি গণমাধ্যমে অস্বীকার করেছেন।
সংসদ সদস্য জলি জানান, ফেসবুকে যে অডিটটি আপলোড করা হয়েছে, সেটি তার কথোপকথন নয়। অন্যদিকে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোডকৃত অডিও রেকর্ডটি নারী সংসদ সদস্য ও তার কথোপকথন।
কানিজ আইরিন জাহান বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলিকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে আমন্ত্রণপত্র দিতে একটু দেরি হয়। সোমবার বেলা ১১টায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শামসুন্নাহার রেখা তাকে ফোনে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির চিঠি কেন তিনি পাননি এর কারণ জানতে চান। চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে আমি তাকে জানিয়েছি।”
মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আরও বলেন, “রেখা আপার কাছ থেকে ফোন নিয়েই সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি আমাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করবেন বলে হুমকি দেন। আমি দুর্নীতিবাজ এমন অশালীন কথা বলে ১০ মিনিটের মধ্যে পাবনা থেকে তাড়ানোর ক্ষমতা আছে বলেও আমাকে শাসান।”
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, “ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে মহিলা এমপিকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জানতে চান। চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জানালে বাসায় কেন লোক পাঠানো হয়নি বা ফোন করা হয়নি তা জানতে চান। একপর্যায়ে নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘এই আপনি কী হয়েছেন? আপনি নারী হয়ে নারীদের সম্মান করেন না। আপনাকে এক থাপ্পড় মেরে পাবনা ছাড়া করব কিন্তু, বেশি স্পর্ধা হয়েছে। সব কিছু কি আপনার লিজ দেওয়া হয়েছে?”
এ সময় তাকে আরও বলতে শোনা যায়, “মেয়েদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন, আপনাকে কী করে পাবনা ছাড়া করতে হয়, তার ব্যবস্থা আমি করছি। আপনাকে পাবনা ছাড়া করা মাত্র ১০ মিনিটের বিষয়...।”
এ ঘটনায় কানিজ আইরিন জাহান বলেন, “আমার কাজে অনিয়ম, ভুল-ক্রুটি পেলে তিনি বকা দিতে পারেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলতে পারেন না।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমার মা-বাবাও কখনো আমাকে থাপ্পড় দেননি। অথচ নারী দিবসে আমাকে এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। আমি এখানে সরকারের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, নারী দিবসের দিনে থাপ্পড় খেতে নয়।”
ঘটনার পর থেকে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নারী সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, “ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। নিজের দুর্নীতি আড়াল করতেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মিথ্যা রটাচ্ছেন। আমি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক ও আমাদের সদর আসনের এমপিকে অবহিত করেছি। তাদের পরামর্শে পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং দলীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভাও করেছি।”
জলি আরও বলেন, “আমি জেনেছি তিনি (মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা) কানিজ আইরিন জাহান একজন দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তা। আমাকে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি রাখবেন না। অথচ নাম ব্যবহার করে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি। নারী সমাজের প্রতিনিধিকে অপমান, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করে তিনি সমগ্র নারী জাতির অবমাননা করেছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।”
অশালীন আচরণ, শারীরিক লাঞ্ছিত করার হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি একজন নারী জনপ্রতিনিধি। আমার ওপর অনেক দায়দায়িত্ব রয়েছে। আমার সঙ্গে তার এমন কোনো শত্রুতা নেই যে নারী দিবসে একজন নারী হয়ে আরেক নারীর সম্মানে আঘাত করব।”
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মোখলেসুর রহমান জানান, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।