ভ্রমণ

নেরুদা, বাড়ি আছো?

মহুয়া রউফ প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩, ০৯:৩৩ পিএম

সান্তা মারিয়া হাসপাতাল, সান্তিয়াগো, চিলি। নেরুদা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। প্রায় ঘুমিয়ে আছেন। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিনা বোঝা যাচ্ছে না। সমুদ্রপ্রেমী ছিলেন তাই সমুদ্রের পাড়ে বাড়ি বানিয়েছেন একটি। বাড়ির বিছানা থেকে সমুদ্র দেখা যায়। হসপিটালের এই বিছানা থেকে আকাশ দেখা যাচ্ছে। আকাশে আধখানা চাঁদ। নেরুদার বিছানা থেকে সে চাঁদ আড়াল। তাঁর শরীর ক্লান্ত। তিনি কর্কট রোগে আক্রান্ত। কক্ষে প্রবেশ করলেন এক ব্যক্তি। ডাক্তারের মতোই তার পোশাক-আশাক। গড়নে লম্বা। নীল চোখ। দেখতে আমেরিকান। হাতে সিরিঞ্জ। রাত গভীর। ভদ্রলোক এগিয়ে যাচ্ছেন নেরুদার বিছানার দিকে। চারদিকে নিস্তব্ধতা। ভদ্রলোক চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিলেন।  নেরুদার খাটে বসলেন শরীরের অর্ধেক ভার নিয়ে। বাকি ভার খাটের বাইরে। এরপর দৃষ্টি স্থির  নিজের হাতের ইনজেকশন সিরিঞ্জটির দিকে। আমি ঘামছি। আমি খুব ঘামছি। আমার খুব পিপাসা পেয়েছে। আমি ছটফট করছি পিপাসায় সান্তিয়াগোর একটি হোস্টেলের বিছানায়। আমার ঘুম ভেঙে গেলো।

নেরুদার বাড়ির প্রবেশমুখ


এ কি! কক্ষের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি তো দিব্যি চলছে! আমার খাটের মাথার কাছের ছোট টেবিলটার দিকে তাকালাম। একটি ফানটার বোতল আছে বটে কিন্তু তাকে নেই কোনো পানি। ফানটা কিনেছিলাম। খেয়ে-দেয়ে এখন সেটিকে প্রতিদিনের পানির বোতল বানিয়েছি। হাত বাড়িয়েছি জানালার পর্দায়। সেটা সরালেই শহরের প্রধান সড়ক। আমার রুমটা পড়েছে একেবারেই রাস্তার ধারে। পরিচ্ছন্ন রাস্তা। রাস্তায় জ্বলছে রাতের আলো। আমি বিছানা ছাড়লাম। কক্ষ থেকে বেরিয়েই সিঁড়ি। কাঠের সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেই রান্নাঘর। টেপের পানিই খাচ্ছি চিলিতে আশা অব্দি। দ্রব্যমূল্যের খুব চড়া দাম দেখে এই টেপের পানিতেই ভরসা রাখি। হোস্টেলের তরুণী ম্যানেজার বারবারা। বারবারা বললো এ পানি  মন্দ কিছু নয়। ভোর হতে বেশি দূর নেই । আগেই মনস্থির করেছি আজ যাবো নেরুদার বাড়ি- ‘লা চাসকোনা’। যার অর্থ কোকড়ানো চুল।

সকালে বারবারা আমায় লিখে- পড়িয়ে এবং রীতিমতো সাদা কাগজে নগরের মেট্রো রেলপথের মানচিত্র এঁকে এঁকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে কিভাবে তার শহরের দু’খানা মেট্রো ব্যবহার করে শহরের একেবারে শেষ সীমানায় নেরুদার বাড়ি পৌঁছাবো। তারপরে আর মেট্রো স্টেশন নেই, সেখানেই সান- ক্রিষ্টবাল পাহাড়ের পাদদেশে নেরুদার বাড়ি। ছোটবেলায় শিশু রবি ঠাকুর একবার পিতার সাথে হিমালয় যাত্রা করছিলেন। তার বড় দাদা তাকে বারবার বলেছিলো, “...বিশেষ দক্ষতা না থাকিলে রেলগাড়িতে চড়া এক ভয়ংকর সংকট-পা ফসকাইয়া গেলেই আর রক্ষা নাই। তারপর গাড়ি যখন চলিতে আরম্ভ করে, তখন শরীরের সমস্ত শক্তিকে আশ্রয় করিয়া খুব জোর করিয়া বসা চাই, নহিলে এমন ভয়ানক ধাক্কা দেয় যে, মানুষ কে কোথায় ছিটকাইয়া পড়ে তাহার ঠিকানা পাওয়া যায় না।" কিন্তু রবি ঠাকুর এতো সহজেই রেলে উঠে বসলেন যে উনি ভাবতে লাগলেন রেলে ওঠার আসল কাজটি বোধয় এখনো বাকি আছে। তিনি এরপর ন্যূনতম বিপদের আভাস না পাওয়াতে বরং বিমর্ষ হয়ে গিয়েছিলেন। আমার ক্ষেত্রেও বারবারা এতোটাই বিচলিত ছিলো আমার লা চাসকোনা যাত্রায়, রবি ঠাকুর আমার স্মরণে এলো।

সান ক্রিষ্টবাল পাহাড়ের ঢালে নেরুদার বাড়ি। পাবলো নেরুদা তাঁর ছদ্মনাম। একাধারে কবি, নোবেল বিজয়ী কবি, রাজনীতিক, কূটনীতিক। মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি স্বীকৃতি পেয়েছেন। চিলির জাতীয় কবি। তাঁর একটি কবিতার বই বিক্রি হয়েছে বিশ মিলিয়নেরও বেশি বিংশ শতাব্দীতে।
এলাকাটি নিরিবিলি শান্ত। ১৯৫৩ সালে পরিত্যক্ত একটা বাড়ি কিনে তৃতীয় স্ত্রী মাতিলদা কে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী ডালিয়া বয়সে নেরুদার বিশ বছরের বড় ছিলেন। কথিত আছে ডালিয়া থেকে আড়ালে থাকার জন্য এখানে বাড়ি কিনেন। তার নতুন স্ত্রীর চুলের আকার বা ঢং থেকে এসেছে এ বাড়ির নাম- লা চাসকোনা।

বাড়ির নিচ তলাতেই টিকেটের ব্যবস্থা। হাতে দিতে দিতে অফিসার মানুষটি জানালেন কোনো কক্ষের মধ্যে কোনো রকম ছবি তোলা যাবে না। যাবেনা মানে যাবেই না। তবে কক্ষের বাইরের আঙিনায় ছবি তোলা যেতে পারে। যদিও ছবি তোলার দক্ষতায় আমি বেশ ঢিলেঢালা তবু আমার মন ম্রিয়মাণ হয়ে গেলো।  টিকেটের সাথে একটি ছোট ডিভাইস ধরিয়ে দিলেন। দু’দশক আগে নোকিয়ার মোবাইলগুলি দেখতে যেমন ছিলো, ঠিক তেমন দেখতে, তবে তার চেয়ে হালকা ওজনে। গলায় ঝুলিতে নিলাম তাকে। অফিসার বললেন প্রতিটা ছবি বা প্রদর্শিত দ্রব্যের পাশে একটি করে নম্বর দেয়া আছে। কোনো  ছবির পাশে দেয়া নম্বরটি ডিভাইসে চাপ দিলে ডিভাইস ঐ ছবি সম্পর্কে তথ্য দিতে শুরু করবে।  আরো বলেন, আমাদের কোনো গাইড নাই, এই ডিভাইসের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল গাইড আছে। এ ভার্চুয়াল গাইড তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে পর্যটকদের।

অভ্যর্থনা কক্ষ পেরিয়ে ছোট্ট একটি সিঁড়ি দিয়ে সরাসরি উপরে উঠে গেলাম। এখানে পাশাপাশি তিনটি কক্ষ। তিনটির একটি খাবার ঘর। মেঝে কাঠের পাটাতনের। খাবার টেবিলে নানান রঙ্গ-ঢঙের বাসন কোসন। টেবিলে সাজানো আছে নানান দেশ থেকে আনা সুরা পান করার বিশেষ পাত্র বা ব্যবস্থা। বন্ধুদের সুরা দিয়ে আপ্যায়ন করতে পছন্দ করতেন তিনি। সেসব পাত্র আর কিছুই নয়, নানা ধরনের রঙ্গিন গ্লাস। আরো সাজিয়ে রাখা নেরুদাকে স্মরণ করা যায় এমন নানান দ্রব্যাদি।  কূটনীতিক পদে চাকরির কারণে পৃথিবীর নানা দেশে থাকতে হয়েছিল। যেখানেই গেছেন সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন এবং তা দিয়েই সাজিয়েছেন ঘর। এটিই এখন নেরুদা মিউজিয়াম। পাবলো নেরুদা ট্রাস্ট এটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে। ঘরের জানালাগুলিতে দেখলাম তার স্ত্রী মাতিলদার নামের আদ্যাক্ষরের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে।

পাশের কক্ষটিতে একটি বিছানা পাতা। দেখে মনে হলো শোবার ঘর। এ ঘরের জানালা ঠিক দেখতে জাহাজের জানালার মতো। দীর্ঘ জীবন সমুদ্রে কাটিয়েছেন। সমুদ্র প্রেমী ছিলেন । জীবন আর তার কবিতার পরতে পরতে সমুদ্রের প্রভাব। এ কারণেই হয়তো জাহাজের জানালার ঢঙ্গে বৃত্তাকার জানালা বানিয়েছেন ঘরে যাতে ঘরের ভিতরে বসেও মনে করা যায় সমুদ্রে আছেন। ছোটবেলায় নেরুদাকে তার পিতা একবার সমুদ্র দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। নেরুদা সমুদ্রের ঢেউকে ভেবেছেন মাথার বহু মিটার উপরে উঠে আসা বিশাল তুষারপাত, এক মহাবিশ্বের হৃদস্পন্দন। কবিতায় নেরুদা বারবার সমুদ্রে ফিরে আসেন। সমুদ্রকে নিজের বাড়ি ভেবেছেন। নিজেকে একজন ‍‍`আর্মচেয়ার নাবিক‍‍` ভাবতেন। কেউ কেউ পাবলো নেরুদার বাড়িকে বলেন সমুদ্রের মন্দির। তিনি তার ভ্রমণে সমুদ্র এবং মহাসাগরের মুখোমুখি হয়েছেন বারবার। সমুদ্র এবং মহাসাগরের মেজাজ বর্ণনা করেছেন বারংবার কবিতায়। কক্ষের বৃত্তাকার জানালার আমায় সে কথা মনে করিয়ে দেয়। কবির অন্য একটি বাড়িকে সমুদ্রের মতো করে ডিজাইন করা হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে সেটা আপাতত বন্ধ আছে, তাই এ যাত্রায় যেতে পারলাম না।

নেরুদার বাড়ির বাগানে

 

প্রতিটা ঘর থেকে বাগানে যাওয়া যায়। নিজের তদারকিতে নিজের পছন্দ মতো ডিজাইনে এই বাড়িটি বানান। নেরুদার ঘরের দেয়ালে ঝুলছে ল্যাটিন চিত্রকর দিয়েগো রিভেরার আঁকা ছবি আছে। সে ছবি নেরুদার স্ত্রী মাতিলদার। মাতিলদা এখানে বিশেষ ভঙ্গিমায়। ছবিতে মাতিলদার দুটি মুখ কিন্তু মাথা একটি। মুখ দুটি দুদিকে। একটি মুখ দর্শকের দিয়ে অর্থাৎ সামনের দিকে অপরটি বামে তাকানো। মাতিলদার কোঁকড়া চুল। চিত্রকলার এই কোঁকড়া চুলে ভেসে উঠে নেরুদার মুখ। মাটিলদার বিশেষ ভঙ্গিমায় আঁচড়ানো  চুলে ভেসে উঠেছে পাবলো নেরুদার মুখ।

দেয়ালের আরেকটি ছবি থেকে আমি মনোযোগ সরাতে পারছিনা। সেটি আমাদের শ্রীলংকার সমুদ্র সৈকতের ছবি। সে সৈকতে দাঁড়িয়ে নেরুদা। আকারে খুব ছোট সে ছবি, বেশ কাছে গিয়ে তাকাতে হয় তবেই স্পষ্ট হয়। নেরুদার সাহিত্যিক খ্যাতি চিলির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সে সময়কার একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেরুদাকে কিছু পর দেশের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল কোথায় যেতে চাও কূটনীতিক হিসেবে। তিনি এক অচেনা- অজানা শহরের নাম বলেছিলেন। সেটি  আর কিছু নয়, একেবারে আমাদের পাশের দেশ রেঙ্গুন। বার্মার পরে  তিনি সিলনে (আধুনিক শ্রীলঙ্কা)  চিলিয়ান দূতাবাসে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন ১৯২৯  সালে। থাকতেন  কলম্বোর ওয়েলওয়াতে সমুদ্রতীরবর্তী একটি কুটিরে। শ্রীলংকায় তার দিনের রুটিন সম্পর্কে নেরুদা লিখেছিলেন কোনো এক নথিতে, “আমি তাড়াতাড়ি উঠে কয়েক ঘণ্টা সমুদ্র সৈকতে হাঁটাহাঁটি করি। তারপর আমি জলে স্নান করি, যা সর্বদা উষ্ণ থাকে এবং আমি সাঁতার কাটতে চেষ্টা করি। তারপর আমি একটি চমৎকার মধ্যাহ্নভোজের জন্য বাড়ি ফিরে যাই।“ দেয়ালের ছবিটি যেনো সেটিই নির্দেশ করছে।

আর একটা দেয়াল চিত্রে নেরুদা পাখির সাথে। তিনি পাখিপ্রেমী ছিলেন। নেরুদার জীবদ্দশায় এ বাড়িতে অনেক পোষা পাখি ছিল। নিজেই পরিচর্যা করতেন তাদের।

বাড়ি থেকে বের হতেই ছোট আঙিনা বা উঠান। হরেক রকম গাছ। উঠানে চেয়ার-টেবিল পাতা আছে। দর্শনার্থীরা বসতে পারেন সেখানে। আপাতত উঠানে আমি একা। আশেপাশে কেউ নেই। স্টিলের উপরে সাদা ধবধবে রং করা এক চেয়ারে বসে পড়লাম। একটু বিশ্রাম হবে, খানিক আরামও পাবো। পর্যটক আছে কক্ষে, কিন্তু পর্যটকের আধিক্য বা উৎপাত নেই। আমি আমার ক্যামেরা বের করলাম। নির্দেশ ছিল ঘরের মধ্যে কোনো ছবি তোলা যাবে না। বাগানের ছবি তোলা যাবে না এমন তো বলেনি। আমি অতি সতর্কতায় বাগানের কিছু ছবি বন্দি করলাম আমার ক্যামেরায়।  ক্যামেরায় যখন ‘ক্লিক’ করে একটি ক্ষীণ শব্দ হয়, মনে হয় যন্ত্রটাকে দুমড়ে মুচড়ে এমন দশা করি যেন সে আর শব্দ করতে না পারে। কিন্তু ক্যামেরা চালনায় আমার অপরিসীম অদক্ষতা আমার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। আমার সে আশায় গুড়ে বালি। আমি ভয় ভয় মুখ করে কয়েকটা ছবি তুললাম। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, যে সকল দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছিল একদা তারা ধীরে ধীরে অনেক সন্দেহ প্রবণ হয়েছে। সহসা তারা অন্য জাতি গোষ্ঠির নাগরিককে বিশ্বাস করতে পারে না। তার অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। ইতিহাস বলে, নানান চরবৃত্তি বা গোয়েন্দাবৃত্তি ঘটেছে এসব দেশে নানান সময়ে। সে সংশয় থেকে বারবার মনে হচ্ছে, না জানি কোন কোন গাছের ঝোপে আছে হরেক রকমের ক্যামেরা। কেউ বা কারা কোনো এক গোপন কক্ষে বসে সেগুলি তদারকি করছে। এই বুঝি আমার খপ করে ধরে আমার ক্যামেরা জব্দ করে আমায় জেলে  ঢুকিয়ে দিলো।  আমি আমার ক্যামেরা বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।

উঠানে দাঁড়িয়ে আছে একটি সরু বাকানো সিঁড়ি। ছোট্ট সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের আরেক ধাপ উপরে উঠে গেলাম। পাথর দিয়ে তৈরি সিঁড়ি। একেবারে বেঢপ পাথর। কিন্তু সে পাথর সুরুচির সৃষ্টি করেছে। এখানে নেরুদার একটি বার, বৃহৎ কাঁচ দিয়ে ঘেরা। ভিতরে প্রবেশের সুযোগ নেই। তবে বাইরে থেকে তার সবটা স্পষ্ট দৃশ্যমান। নিকট বন্ধুদের নিয়ে পানাহার চলতো এখানে।  এই বাড়ির সামনে দিয়ে এগিয়ে গেলেই আরেকটি বৃহৎ কক্ষ। দর্শনীয় অনেক অনেক সামগ্রী। তার একটি আমার কোমর অব্দি উঁচু কাপড়ের তৈরি  হাতি। আমি আমার গলায় ঝুলানো অডিও টেপটিতে চাপ দিলাম। যন্ত্রের ভার্চুয়াল কণ্ঠটি বলে যাচ্ছে যা তা হলো নেরুদা  এটি সংগ্রহ করেছেন ভারত থেকে। তাইতো হবে, কারণ যে কাপড় দিয়ে এ হাতি তৈরি তা তো ভারতীয়। সে আমি খুব বুঝেছি।

নেরুদার বার
 
এখান থেকে বেরিয়ে আরেক সিড়ি দিয়ে পাহাড়ের আরেক ধাপ উপরে উঠে গেলাম। সেখানেও দু’তিনটে কক্ষ। একটি কক্ষ নেরুদার লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা দেখে মন ভারাক্রান্ত হলো। নেহায়েত কম। দেখি তো, অডিও যন্ত্র কী বলে? নেরুদার এত এত বই কোথায় গেলো?  গলায় ঝোলানো অডিও যন্ত্র বলছে নেরুদা তার প্রায় সব বই বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেছেন। বাকি সামান্য কিছু বই তার তিন বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমার পরাণ শান্ত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে বই দান করার মতো মহত্তর কাজ আমায় বিস্মিত করলো।

চারদিক শান্ত। কোলাহলহীন। একজন নিরাপত্তা কর্মী দাঁড়িয়ে। একজন বাগান কর্মী বাগানের গাছে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। গাছের গোসল হচ্ছে। পাতাগুলি সজীব থেকে সজীবতর হচ্ছে। এ নির্জনতায় আমার মন বারবার ডেকে বলছে নেরুদা, বাড়ি আছো?

 

লেখক: পর্যটক, এন্টার্কটিক  অভিযাত্রী