শাপলার রাজ্য-সাতলা গ্রাম। গ্রামটি বরিশাল জেলায় উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূর বিশাল বিলের মধ্যে দেখা মিলবে শাপলার রাজ্যের। পুরো বিলজুড়ে রয়েছে শাপলা ফুলের গালিচা। লতা-পাতায় ঘেরা রয়েছে হাজারো শাপলা। স্থানীরা এটিকে শাপলার বিল নামেই চিনে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, সাতলার প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার চাষ করা হয়। তিন ধরনের শাপলা পাওয়া যাবে এই বিলে। লাল, সাদা এবং বেগুনি রঙের শাপলা সমারোহ। লাল শাপলাই বেশি ফোটে।
শাপলা বিলে সারাবছরই ফুল ফুটে। তবে মার্চ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত শাপলার রাজ্য থাকে ভরপুর। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বেশি ফুটে। তাই পর্যটকদের জন্য শাপলার রাজ্য ঘুরার উপযুক্ত হতে পারে এই তিন মাস।
শাপলা দেখতে খুব ভোরে যেতে হবে এই বিলে। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা ফুলও শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরাও খুব ভোরে বাজারে শাপলা নিয়ে যায়। সেখান থেকেই শাপলা বিক্রি হয় সারাদেশে। শাপলা দেখতে তাই সাতলা গ্রামে একরাত থেকে নেওয়াই ভালো।
শাপলার রাজ্য উপভোগ করতে গেলে খাওয়ার ব্যবস্থা আগ থেকেই করতে হবে। মানে সঙ্গে খাবার নিয়ে যেতে হবে। কারণ এই গ্রামে তেমন খাবারের ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়দের কেউ পরিচিত থাকলে আপ্যায়ন পেতে পারেন। তবে গ্রামের দোকানগুলো স্থানীয় কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন। বরিশাল শহরের দিকে গিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নিতে হবে।
সাতলা গ্রামে পর্যটকদের জন্য থাকারও তেমন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়দের কারো বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে। নয়তো বরিশাল শহরে হোটেলে উঠে খুব ভোরে শাপলা বিলের উদ্দেশ্যে রওনা করতে হবে। শহরের দিকে ভালো আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন।
প্রথমে বরিশাল শহরে যেতে হবে। সড়কপথে কিংবা নৌপথে বরিশাল চলে যান। ঢাকার গাবতলি থেকে ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বরিশালের বাস পাওয়া যাবে। হানিফ পরিবহণ, ঈগল পরিবহন, শাকুরা পরিবহন দিয়ে বরিশাল যেতে পারেন। এসি বাসের ভাড়া নিবে ৭০০-৮০০ টাকা। নন-এসি বাসের সিট পাওয়া যাবে ৫০০ টাকায়।
লোকাল বাসে ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন। কিন্তু এসব বাসে বরিশাল পৌছাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই এসব বাসে না যাওয়াই ভালো।
নৌপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সদরঘাটে রাত ৮-৯ টার মধ্যে অনেকগুলো লঞ্চ পাবেন। সুরভী ৮, পারাবত ১১, সুন্দরবন ৭/৮, কীর্তিনকোলা ১/২ লঞ্চগুলো বরিশাল যাবে। ভোর ৫টায় বরিশাল পৌঁছে যাবেন। সকালে গ্রিনলাইন লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেখানে ডেকের ভাড়া হবে ১৫০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৬০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৪৫০০ টাকা।
বরিশালে পৌছে আবার বাসে করে শিকারপুর যেতে হবে। সেখান থেকে অটোরিক্সা ভাড়া করে উত্তর সাতলা যাবেন। বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি বাস পাবেন। ২ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।
তাছাড়া বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে করেও পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম।