বাংলাদেশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলভূমি বান্দরবান। যার প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির মায়া। পাহাড়, ঝরনা আর সবুজের প্রাচুর্য সবই বান্দরবানের অপরূপ সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বরইতলীতে অবস্থিত নিঝুম ঝরনা। ঝরনাটির বিশেষত্ব হলো যে পাশ দিয়ে ঝরনায় ঢুকবেন, ওই দিক ছাড়া বাকি তিনটি দিকে দিয়ে নেমে এসেছে তিনটি ঝরনা। বাঁয়ে, ডানে এবং সামনে। নিঝুম ঝরনার জলধারায় প্রাণ জুড়াতে প্রতিবছর এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিয়াসুরা।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে যায় এই ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। দেখা যায় বিদেশি পর্যটকদেরও। অসম্ভব সুন্দর এই ঝরনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যা দেখে পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন অনেকে। পাহাড়, ঝরনা ও পাথরভর্তি পাহাড়ি পথ ভ্রমণের স্বাদ নিতে ছুটে যান। অবসরের সময়টাকে উপভোগ করেন।
হঠাৎ ঠিক করলেন, ঘুরে আসবেন নিঝুম ঝরনায়। কীভাবে যাবেন? পথযাত্রা সহজ করতে নিঝুম ঝরনার যাওয়ার বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে নিন।
নিঝুম ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে যেতে হবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বরইতলীতে। বন্ধু বা পরিবার মিলে ৮ জনের একটা টিম করে নিতে পারেন। কম খরচে ঘুরে আসা যাবে। যাতায়াতেও সুবিধা হবে।
এই ঝরনা দেখতে হবে গাইড হিসাবে স্থানীয় কাউকে প্রয়োজন হবে। যে ঝরনায় যাওয়ার পথ দেখাবে আপনাকে।
বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেতে চাচ্ছেন? কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে বসুন। কক্সবাজার টার্মিনাল থেকে উখিয়া যাওয়ার জন্য় মিনিবাস পাবেন। সেই মিনিবাসে উখিয়ার পথে রওনা দিন। কিন্তু উখিয়ায় যেতে হবে না। এর আগেই মরিচ্যায় নেমে যান। বাসের কর্মীকে আগেই বলে রাখুন কোথায় নামবেন। ৩০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন। অটোরিকশা নিয়েও সেখানে যেতে পারেন ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৬০ টাকা।
মরিচ্যা বাজারে নেমে প্রয়োজনীয় খাবার, পানি, ডেটল, ব্যান্ডেজ কিনে নিতে ভুলবেন না। মরিচ্যা বাজার রোডের বাঁ পাশে একটা বড় শিশুগাছ দেখতে পাবেন। ঘুমগাছতলা বললেই স্থানীয়রা দেখিয়ে দেবে। সেই গাছটির পাশ দিয়ে চলে গেছে পাকা সড়ক। সড়কটির মুখেই রয়েছে ইজি বাইক এবং সিএনজি। চালকের সঙ্গে কথা বলে বরইতলী-মংজয় পাড়া-লেবুবাগান ভাবনা কেন্দ্রের সামনে যাওযার ভাড়া ঠিক করে নিন। প্রতি ইজিবাইক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নিবে। আর প্রতি সিএনজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাবে।
স্থানীয় গাইডের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখুন মোবাইল ফোনে। তাকে ভাবনা কেন্দ্রের সামনেই থাকতে বলুন। আপনিও সেখানে নেমে যান।
এরপরই যাত্রা শুরু নিঝুম ঝরনার পথে। ভাবনা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাঁচা সড়ক। খুবই কাদাযুক্ত এই পথ। পথের দুই দিকে লেবুবাগান। লেবুবাগান দিয়ে হেঁটে পাহাড়ি পথ ছেড়ে নেমে যাবেন ঝিরিপথে। ঝিরিপথ দিয়ে স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টা। সেই পথচলায় উপভোগ করবেন জুম চাষ, জাম্বুরাবাগান, পেয়ারাবাগান, কলাবাগান, আমবাগান। ঝিরিপথটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। হাতের ডান পাশে গেলে দেখা পাবেন প্রথম ঝরনা। আর অন্য পথে রয়েছে সবচেয়ে বড় ঝরনাটির। আনুমানিক ১০টির অধিক ছোট-বড় ঝরনা রয়েছে আশপাশের জায়গাজুড়ে। এসব ঝরনা দেখতেই বছরজুড়ে পর্যটক সেখানে ছুটে যাচ্ছে। এক দিনের ছুটিতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন নিঝুম ঝরনার এই মনোরম দৃশ্য দেখতে, যা আপনার অশান্ত মনের প্রশান্তি দেবে।