গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ে। ১৭ জুলাই। সন্ধ্যা। স্পাইক লি’র নেতৃত্বে বিচারক প্যানেলের রায় ঘোষিত হচ্ছে একের পর এক। জাপানি নির্মাতা রয়সুকে হামাগুচি’র ‘ড্রাইভ মাই কার’ এরমধ্যেই জিতে নিয়েছে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। প্রেস জোনে জাপানি সাংবাদিকের উচ্ছ্বাস। পাম দ’র এর ঘোষণা তখনও বাকি। একটু উৎসুক হয়েই পরিচিত হলাম সেই সাংবাদিকের সাথে। জানতে চাইলো, কোন দেশ থেকে এসেছি? বললাম, ‘বাংলাদেশ’।
উত্তরে সুরেলা টানে সেই সাংবাদিক বললেন, "ও বাংলাদেশ... রেহানা"
৭ জুলাই ‘সালে দেবুসি’তে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আ সার্টেন রিগার্ড বিভাগে দেখানো হয়েছে রেহানা মরিয়ম নূরসহ ২০টি ছবি। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে ২৪ টি ছবি। ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় দেয়া হয়ে গেছে আ সার্টেন রিগার্ড বিভাগে ৬ পুরস্কার। তার একটিও রেহানা মরিয়ম নূর পায়নি। অথচ সমাপণী সন্ধ্যায় এই জাপানি সাংবাদিকের মুখে রেহানা মরিয়ম নূর নিয়ে উচ্ছ্বাসটা আমার সাংবাদিকতা জীবনে ‘সিগনিফিকেন্ট’।
এর আগেও তিন-তিনবার কান চলচ্চিত্র উৎসব কাভার করেছি। প্রতিবারই অন্য দেশের ছবির লড়াইয়ের খবর দিয়েছি। নানা দেশের প্যাভিলিয়নে ঘুরেছি। আর রিপোর্টে হা পিত্যেশ করেছি, কবে লড়াইয়ে পাব বাংলাদেশের নাম?
চতুর্থবারে সেই খেদ মিটলো। ১৬ জুলাই সকাল থেকে পরীক্ষা ফলাফলের উত্তেজনা নিয়ে প্রতীক্ষা। ঢাকা থেকে সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকর্মীসহ কত কত জনের ইনবক্স বার্তা। কেউ বলছেন, ‘ফেইসবুক লাইভ করবেন’। কেউ বা জানতে চাচ্ছেন, ‘কেমন কানাঘুষা চলছে?’
নিজের টেলিভিশনে বিশেষ বুলেটিনে হাজির হয়েছিলাম যাবতীয় আপডেট নিয়ে। হৃদয় আর যুক্তি মিলিয়ে বিশ্লেষণ করছিলাম সাথে আরেক সহকর্মীর সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছিল। আ সার্টেন রিগার্ড বিভাগের পুরস্কারের সন্ধ্যার আমন্ত্রণপত্র অনলাইনে সংগ্রহ করতেও বেগ পেতে হয়েছে। ১৩ জুলাই থেকে অনলাইনে পাবার কথা। কিন্তু সাইটে যেতেই ‘আনএভেইলেবেল’ দেখাচ্ছে। সমাধান পেতে ছুটেছি একবার অডিও ভিজ্যুয়াল কাউন্টারে। আরেকবার টিকেট অফিসে। তেমন কোন সদুত্তর পাইনি। অতঃপর ১৪ জুলাই সাইট ‘এভেইএবেল’ হয়েছে। সাথে সাথেই ‘বুকড’।
১৬ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টা থেকেই সালে দেবুসি’র সামনে কিউ পড়ে গেছে। প্রেস জোন থেকে চোখে পড়ছিল। আর দেরী না করে কিউ’র দিকে ছুটলাম। একটু একটু করে কিউ এগুতে থাকলো। সিকিউরিটি পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সালে দেবুসি থিয়েটারে। থিয়েটার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা তরুণি জানিয়ে দিল, যেখানে খুশী সেখানে বসতে পার। অবাক হলাম, ছবি দেখতে কখনো এই স্বাধীনতা মেলে না।
তবু নিজের ‘জে’ সিরিয়ালাটাই অনুসরণ করলাম। বাংলাদেশ থেকে কাভার করতে যাওয়া আরেক সাংবাদিক জনি হক বলেছিল, তার জন্য জায়গা রাখাতে। রেখেওছিলাম। হঠাৎ ফোন!
জনি জানতে চাইছে, আমি কোথায়? ওর কণ্ঠে তাড়া। ফোন হাতে চোখ গেল সামনে। হাত দিয়ে ডাকছে জনি। ‘জে’ সিরিয়াল ছেড়ে দিয়ে জনির কাছে পৌঁছে গেলাম। এটা ‘বি’ সিরিয়াল। থিয়েটারের একদম সামনে। জনি বললো, দেখেন ‘ডি’ সিরিয়ালের সিটগুলোতে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ লেখা কাগজ সাঁটা। বুঝলাম, জনির মুন্সিয়ানা।
উত্তেজনার পারদ তখন চরমে। মরিয়া আমরা দুই সাংবাদিক। কোনভাবেই মিস করা যাবে না একটা মুহুর্তও। ১,০৬৮ ধারণ ক্ষমতার 'সালে দেবুসি' একটু একটু করে পূর্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের প্রতীক্ষা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ টিমের জন্য।
(চলবে)