ক্যাচ মিস : বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন সমস্যা

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১, ০৩:০৯ পিএম

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের এখনো মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে এরই মধ্যে ৩ ম্যাচ খেলে ফেলেছে তারা। কিন্তু একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। উল্টো হেরেছে বাজেভাবে। ব্যাটে-বলে কোনো বিভাগেই সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্যাচ মিস। বাছাইপর্ব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা ৬ ম্যাচে দৃষ্টিকটুভাবে ক্যাচ মিসের মহড়া দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা, যা বাংলাদেশ দলের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩টি ক্যাচ মিস করে বাংলাদেশ। যার মূল্য দিতে হয় ৩ রানের হার দিয়ে। রোস্টন চেজের ক্যাচ দুইবার মিস করেন মেহেদী হাসান। এছাড়া আফিফ হোসেন মিস করেন জেসন হোল্ডারের ক্যাচ। আর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া নিকোলাস পুরানের স্ট্যাম্পিং মিস করেন লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচেও ক্যাচ মিস করেন লিটন দাস। ভানুকা রাজাপাকসের যখন ১৪ রানে, তখন তার ক্যাচ মিস করেন লিটন। এছাড়া চারিথ আসালাঙ্কা যখন ৬৩, তখন তার একটি ক্যাচ মিস করেন লিটন। আর এই দুইজনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে বাংলাদেশকে হারের পথ দেখান। এর আগে বাছাইপর্বে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ওমানের জতিন্দর সিংয়ের ক্যাচ মিস করেন।

বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৯টি ক্যাচ মিস করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৬টিই ছিল ওপরে ওঠা সহজ ক্যাচ। এই ক্যাচগুলো মিস করেছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, লিটনের মতো ভালো ফিল্ডার হিসেবে খ্যাত ক্রিকেটাররা।

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস নিয়ে ভেতরে বাইরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে ক্যাচ মিসের পক্ষে সাফাই দেন দলের ফিল্ডিং কোচ ওটিশ গিবসন। তিনি বলেন, “ক্যাচ মিস হচ্ছে। সব ক্রিকেট ম্যাচেই দুই একটা ক্যাচ মিস হয়। যখন ক্যাচ একটা ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দেয়, এটা বেশি আলোচিত হয়। আমরা প্রচুর ক্যাচ অনুশীলন করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচে যখন চাপ তৈরি হয়, ছেলেরা ক্যাচ মিস করছে।”

ক্যাচ মিসকে মোটেও চিন্তার কারণ হিসেবে দেখছেন না টাইগারদের ফিল্ডিং কোচ। তার ভাষায়, “এটা কি চিন্তার বিষয়? আমি বলব না এটা চিন্তার বিষয়। কারণ, আমরা প্রতিদিন ক্যাচ অনুশীলন করি। কিন্তু সত্যি হচ্ছে, যখন ক্যাচ মিস হয়, ম্যাচ শেষে এটাকেই বড় করে দেখা হয়। আমরা আমাদের স্কিল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করি, এর মধ্যে ক্যাচও আছে।”

তবে ক্যাচ মিসের বিষয়টি বড় করে দেখছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। বিসিবি প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বাশার বলেন, “আপনার এক দিন ব্যাটিং বা বোলিংয়ে খারাপ যেতে পারে। কিন্তু আমাদের ফিল্ডিংয়ে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। এটা বড় টুর্নামেন্টগুলোর ক্ষেত্রে আরও প্রাসঙ্গিক। মিস ফিল্ডিং দলের ছন্দ নষ্ট করে ফেলে। আমাদের ফিল্ডিং ভালো, কিন্তু আমি এ জায়গায় আরও প্রচুর উন্নতি দেখতে চাই।”

ক্যাচ মিসের কারণ হিসেবে মানসিক চাপকে বড় করে দেখছেন বাশার। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা মানসিক চাপ নিতে পারছে না। তাই এ সমস্যা হচ্ছে। বাশার বলেন, “অনুশীলনে আমরা প্রচুর ফিল্ডিং করি। যখন আমরা ঘরের মাঠে বা বড় টুর্নামেন্ট খেলি, তখন মানসিক চাপ সামলাতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, আমরা চাপ সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের কয়েকজন সেরা ফিল্ডার ক্যাচ মিস করছে। চাপের মুহূর্ত কীভাবে সামলাতে হবে, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।”

এ বছর বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের খতিয়ান

বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের সমস্যা শুরু হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে, যা ২০২১ সালে এসে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চলতি বিশ্বকাপসহ এ বছর বাংলাদেশের অন্তত ৮ ম্যাচে ক্যাচ মিস সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে সাদা বলের ক্রিকেটে ৬ ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ১২টা ক্যাচ মিস করেছিল। দুটি ওয়ানডেতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ মিস করেছে। এক ম্যাচে তো তারা অ্যালন ফিনের ৪টি ক্যাচ মিস করেছিল।  

পরের মাসে পরপর দুই টেস্টে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের ক্যাচ মিস করেছিল। জীবন পেয়ে প্রথম টেস্টে তিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেন, আর পরের টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। মে মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল শ্রীলঙ্কা। ওই সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে অধিনায়ক কুশল পেরেরার ক্যাচ তিনবার মিস করে বাংলাদেশ; প্রথমবার ৬৮ রানের মাথায়, দ্বিতীয়বার ৮০ রানে ও তৃতীয়বার ৯৯ রানে পেরেরার ক্যাচ মিস করেছিল বাংলাদেশ। জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে ৬টি ক্যাচ মিস করেছিল বাংলাদেশ। সাদা বলের ক্রিকেটেও কয়েকটি ক্যাচ মিস করে। বিশ্বকাপের ৬ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর দল ৯টি ক্যাচ মিস করে। 

সূত্র : ক্রিকইনফো