একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো প্রতিপক্ষই সহজ জয়ের চিন্তা নিয়ে মাঠে নামত। একটু শক্ত প্রতিরোধ করলেই প্রতিপক্ষের কাছে বিস্ময়ের শেষ ছিল না। সেই সময়টা পেছনে ফেলে আসেনি বাংলাদেশ? নাকি এখনো তকমা সেই ‘আন্ডারডগ’ই?
টি-টোয়েন্টির মতো ক্রিকেটের ছোট সংস্করণে একটু খাপছাড়াই ছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে পিচে থিতু হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেলেও টি-টোয়েন্টিতে নিতে হয় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। অপরিপক্কতার একটা সুস্পষ্ট ছাপ পাওয়া যাচ্ছিল টাইগারদের মধ্যে। কিন্তু সাম্প্রতি জিম্বাবুয়ে (২-১), অস্ট্রেলিয়া (৪-১), নিউজিল্যান্ডের (৩-২) বিপক্ষে সিরিজ জয় কাকতালীয় বা অঘটন নয়। জিম্বাবুয়ে যদিও দল হিসেবে আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই, তবে অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডকে হারানো টাইগারদের সামর্থ্যকে শক্তপোক্তভাবে প্রমাণ করে।
অন্যদিকে, টুর্নামেন্টে প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে। যেখানে বাংলাদেশকে মুখোমুখি হতে হবে স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। ১৭ অক্টোবর প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে স্কটল্যান্ডের, যেখানে ফেবারিট বাংলাদেশই। সুতরাং বলা যায় গ্রুপ পর্ব তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না বাংলাদেশের সামনে।
যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অতীত আসর বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। ২০০৭ সালের আসরে বাংলাদেশ সেরা আটে জায়গা করে নিতে পারলেও ২০০৯, ২০১০, ২০১২ সালের আসরে বলার মতো কোনো গল্প নেই। ২০১৪ সালে টুর্নামেন্ট ষোলো টিমে উন্নীত করলে বাংলাদেশও জয়ের মুখ দেখার সুযোগ পায়। তবে গল্প বেশিদূর আগায়নি। ২০১৬ সালের আসরে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভাঙে ভারতের বিপক্ষে হেরে।
আগের আসরগুলোর চেয়ে এবারের পার্থক্য—গ্রুপ পর্ব বা সুপার ১২ কোথাও বাংলাদেশ আন্ডারডগ হিসেবে থাকবে না। যে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই করার সামর্থ্য দলের আছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মাঠের পারফরম্যান্স কোনো দলকেই টাইগারদের হালকা করে দেখার সুযোগ দিচ্ছে না।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্বে বেশ সাবলীলভাবে এগিয়েছে টাইগাররা। সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম ব্যাটিং লাইন আপের মূল শক্তি। লোয়ার অর্ডারে বাড়তি শক্তির জায়গা আফিফ হোসেন। দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি খানিক ভোগালেও লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম বুঝে-শুনে খেললে তামিমের শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব।
বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান দারুণ ফর্মে আছে। মাত্রই আইপিএল থেকে 'সাকসেসফুল মিশন' শেষ করে ফিরলেন। এর আগে ঘরের মাঠের সিরিজেও দেখিয়েছেন তাণ্ডব। তটস্থ রেখেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। নাসুম আহমেদও দারুণ সম্ভাবনাময়—সে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ধারাবাহিক ম্যাচে। সাকিব আল হাসান তো আছেনই। তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নিজেদের সামর্থ্যের সেরা দিয়ে খেললে টুর্নামেন্ট থেকে খালি হাতে ফিরতে হবে না বাংলাদেশকে।