চায়ের শহরে বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়

সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম
ছবি: ওয়ালটন

সাকিব আল হাসান, তাউহিদ হৃদয় আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ৩৩৮ রানের রেকর্ড সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যকে ডিফেন্ড করতে মোটেও সমস্যা হয়নি টাইগার বোলারদের। প্রথম ১০ ওভারে আইরিশ দূর্গ অক্ষত থাকলেও এরপর থেকেই শুরু হয় ধ্বসে পড়া।

দ্বাদশ ওভারে সাকিব শুরু করেছেন। এরপর ইবাদত, তাসকিন, নাসুমরা মিলে আইরিশ ব্যাটারদের জীবন অতিষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন ড্রেসিংরুমের পথ। আর তাতেই আইরিশদের বিপক্ষে এলো রেকর্ড গড়া জয়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার (১৮ মার্চ) ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের রানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে এই মাঠেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানের ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। সেটাই ছিল এতদিন সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড।

টাইগারদের দেওয়া পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন দুই আইরিশ ওপেনার। স্বাগতিক বোলারদের তোপের মুখে রানের চাকা সচল রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা।

পল স্টারলিং কিছুটা সাবলীক থাকলেও আরেক প্রান্তে স্টিফেনের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। এরপর দশম ওভার করতে আসা সাকিবের ওভার থেকে ১৫ রান আদায় করেন ভুগতে থাকা এই আইরিশ ওপেনার। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভার শেষে আইরিশদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫১ রান।

সাকিবের এই ওভারেই যেন রান করার উপায় খুঁজে পান স্টিফেন। পরের ওভার করতে আসা ইবাদতকে হাঁকান আরও দুই বাউন্ডারি। ভুগতে থাকা আইরিশ স্কোরবোর্ড যেন হুট করে সাবলীল হতে থাকে।

তবে আগের ওভারেই ১৫ রান হজম করা সাকিব বেশিদূর বাড়তে দেননি স্টিফেনকে। দ্বাদশ ওভারে বল হাতে নিয়েই ফিরিয়েছেন তাকে। সাকিবের বলে স্টিফেনের ক্যাচ নিয়েছেন উইকেটের পিছনে থাকা মুশফিকুর রহিম। দলীয় ৬০ রানে ফেরার আগে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেছেন এই আইরিশ ওপেনার।

পরের ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেটের আনন্দে ভাসান ইবাদত হোসেন। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তার করা বলে পুল করতে গিয়েছিলেন আইরিশ ওপেনার পল স্টারলিং। কিন্তু গ্লাভসে লেগে সেই বল পিছনে গেলে লেগ সাইডে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেনে মুশফিকুর রহিম।

১৫তম আক্রমণে এসে আবারও উইকেটের দেখা পান ইবাদত। তার বলে মুশফিকের ক্যাচ হয়ে ফিরে যান হ্যারি টেক্টর। পরের ওভারেই আইরিশ অধিনায়কের উইকেট উপড়ে ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ। এই ম্যাচে মাত্র পাঁচ রান করতে পেরেছেন তিনি।

৩৩৯ রানের পাহাড়সম রানা তাড়া করতে নেমে ৭৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে রীতিমতো খাঁদের কিনারায় চলে যায় আয়ারল্যান্ড। এক ওভারের ব্যবধানে ব্যবধানে লরকান টকারকেও ফিরিয়ে আইরিশদের আরও খাঁদের কিনারায় ঠেলে দেন তাসকিন। গালিতে উড়ন্ত ক্যাচ নিয়ে তাসকিনকে সাহায্য করেন ইয়াসির আলি।

এরপর দলের হাল ধরেন আইরিশ ব্যাটার কার্টিস ক্যাম্পার ও জর্জ ডকরেল। দুজনে মিলে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে রানের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন।

দলীয় ১০৯ রানে ক্যাম্পারকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে এই প্রতিরোধ ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ব্যক্তিগত ১৬ রানে ক্যাম্পার ফেরায় ডকরেলের সাথে ভাঙে তার ৩৩ রানের জুটি।

২৬তম ওভারে ডেলানিকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন নাসুম। ডেলানিকেও লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন তিনি। একই ওভারে ওভারে অ্যান্ডি ব্যাকবার্নিকেও ফিরিয়ে দেন নাসুম। আর এতে টাইগারদের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।

অন্যপাশে যখন সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত তখন অন্যপ্রাশে ডকরেল একা হাতে লড়াই করেছেন। তবে কখনোই তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। ২৯তম ওভারের শেষ বলে নিজের তৃতী উইকেট শিকার করেন ইবাদত। তার বলে মুশফিকের ম্যাচে পঞ্চম ক্যাচ হয়ে ফেরেন মার্ক অ্যাডায়ার।

৩১তম ওভারে ডকরেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয় নিশ্চিত করেন ইবাদত। ফেরার আগে ৪৫ রান করেন ডকরেল। ৪২ রানে চার উইকেট নিয়ে এ ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার ইবাদত। এছাড় তিন উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ, দুই উইকেট গেছে তাসকিনের পকেটে। আর এই উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। 

এর আগে  টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৫ রানে ব্যক্তিগত তিন রান করে ফিরে যান অধিনায়ক তামিম।

এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেন আরেক ওপেনার লিটন। কিন্তু দুর্দান্ত শুরু করা লিটন ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ। দলীয় ৪৯ রানে ফেরার সময় তার নামের পাশে যোগ হয়েছে মাত্র ২৬ রানের ইনিংস।

লিটনের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নতুন জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত। দুজনের ব্যাটে প্রাথমিক চাপ সামলে বেশ স্বাচ্ছন্দেই এগিয়ে চলছিল স্বাগতিকদের ইনিংস। তবে দলীয় ৮১ রানে ফর্মে থাকা শান্ত আইরিশ স্পিনার অ্যান্ডি ব্যাকবার্নির বলে বোল্ড হলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। এ ম্যাচে শান্ত করেছেন ২৫ রান।

এরপর অভিষিক্ত তাউহিদ হৃদয়কে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে চাপ সামলে রানের গতি সচল রাখেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন হৃদয়।

৬৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেছেন সাকিব। ফিফটির পরই ব্যাট হাতে ঝড় শুরু করেন তিনি। তার ব্যাটে দলের রানের চাকার গতিও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ৩৫তম ওভার করতে আসা হ্যারি টেক্টরকে এক ওভারেই মেরেছেন পাঁচ চার।

অন্যপ্রান্তে এই ম্যাচেই ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া হৃদয় দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। এর আগে ইংল্যান্ড সিরিজের দলে থাকলেও একাদশে সুযোগ মেলেনি হৃদয়ের। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি। ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করা হৃদয় সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দেন জুটিতে।

হৃদয় তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকে ফিফটি করেন। এর আগে অভিষেকে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ফরহার রেজা ও নাসির হোসেন। তবে অভিষেকে বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ রান (৯২) রান হৃদয়ের।

ফিফটি পর দ্রুত রান তোলায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সাকিবের সামনে। কিন্তু আইরিশ পেসার হিউমের নিরীহ বলে ক্যাচ আউট হলে সেঞ্চুরি মিসের হতাশায় পুড়তে হয় তাকে। দলীয় ২১৬ রানে সাকিব ব্যক্তিগত ৯৩ রানে ফিরলে ভাঙে হৃদয়ের সাথে তার ১৩৫ রানের জুটি।

এরপর ছয় নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম আট বলেই তার ব্যাট থেকে আসে দুইটি বড় ছক্কা। অন্যদিকে হৃদয়ও তখন রানের গতি বাড়ানো শুরু করেন।

এ ম্যাচে মুশফিক যেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্য দেখানোর পণ করেই নেমেছিলেন। প্রায় প্রতি বলেই তার লক্ষ্য ছিল বাউন্ডারি বের করা। ব্যাট হাতে ঝড় তুললেও অল্পের জন্য হাতছাড়া করেন ফিফটি।  দলীয় ২৯৬ রানে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ বলে সমান তিন চার ও ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস।

মুশফিক ফেরার পর মাত্র এক বলের ব্যবধানেই ফিরে যান হৃদয়। সাকিবের মতো হৃদয়কেও এ ম্যাচে পুড়তে হয়েছে সেঞ্চুরি মিসের হতাশায়। দলীয় ২৯৭ রানে ফেরার আগে হৃদয় খেলেছেন ৮৫ বলে আট চার ও দুই ছক্কায় ৯২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

হৃদয় ফেরার পরই টাইগারদের দলীয় রানের গতি কমতে থাকে। এর মধ্যে তাসকিন আহমেদ ফেরেন সাত  বলে ১১ রান করে। শেষদিকে ইয়াসির আলি রাব্বির ১০ বলে ১৭ রান ও নাসুম আহমেদের সাত বলে ১১ রানের ক্যামিওতে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ।