বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় টাইগারদের

সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩, ০৬:১৮ পিএম

এই সিরিজের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ওইটাতে হারলেও প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেন বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

রোববার (১২ মার্চ) মিরপুর শেরে-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে চার উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। আর এতে টানা দুই ম্যাচ জিতে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ল সাকিব আল হাসানের দল।

বোলাররা আগেই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। বল হাতে শুরুতে তাসকিনের তোপ, পাওয়ার প্লে শেষে সাকিব-হাসানের বড় উইকেট শিকার। এরপর বল হাতে চার ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে তুলির শেষ আচর টেনেছিলেন মিরাজ।

তবে বোলাররা ১১৭ রানে ইংল্যান্ডকে আটকে দিলেও ব্যাটাররা বেশ ভয়ই ধরিয়েছিলেন। শুরুতেই লিটন আর রনি ফিরলে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। এরপর শান্ত এবং মিরাজ মিলে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে জয়ের রাস্তা তৈরি করেন। কিন্তু শেষদিকে আট রানে তিন উইকেট হারিয়ে রাস্তা কঠিন হয়ে গিয়েছিল টাইগারদের জন্য।  তবে শেষ পর্যন্ত একপাশ আগলে রেখে দলের জয়ে দারুণ অবদান রাখেন শান্ত। 

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্যাম কারেনকে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সল্টের হাতে ধরা পড়েন লিটন। প্রথম তিন ওভারে এক উইকেট হারিয়ে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ১৭ রান।

চতুর্থ ওভার করতে আসার জোফরা আর্চারের ওভার থেকে আসে মাত্র চার রান। নাজমুল হোসেন শান্ত ও রনি তালুকদার ইংলিশ পেসারদের সামলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলেন।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। ফিরে যান আরেক ওপেনার রনি। ব্যক্তিগত ৯ রানে শেষ হয় তার অস্বস্তিকর ইনিংস। এতে মাত্র ১১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লেতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৩২ রান।  ১০ম ওভারে আদিল রাশিদকে এক বলের ব্যবধানে দুই চার হাঁকিয়ে খোলস ছেড়ে বের হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাউহিদ হৃদয়। ১০ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ৫৫ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।  

১১তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই হৃদয়কে ফেরান অভিষিক্ত ইংলিশ স্পিনার রেহান আহমেদ। নেহাতই একটি শর্ট ডেলিভারিতে পয়েন্ট অঞ্চলে ক্রিস ওকসের ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ১৭ রানের ইনিংস।  

এরপর মিরাজকে নিয়ে নতুন জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত। দুজনে মিলে রানের চাকা সচল রাখার পাশপাশি দলের জয়ের রাস্তাও তৈরি করছিলেন। আদিল রাশিদের করা ১৪তম ওভারের প্রথম বলে কাভারের উপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান মিরাজ।

একই ওভারে শান্তকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন ইংলিশ উইকেটরক্ষক বাটলার। ওই বলের চারসহ মোট ১২ রান এলে জয়ের রাস্তা সহজ হয় টাইগারদের।

মঈন আলির করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে আরও এক বিশাল ছক্কা হাঁকান মিরাজ। তার এই ছক্কায় রানরেট একদম কমে আসে টাইগারদের। এক বলের ব্যবধানে রিভার্স সুইপে চার হাঁকান শান্ত।

জয় থেকে ২১ রানের দূরত্বে ফিরে যান মিরাজ। তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ২০ রান। মিরাজ ফেরার পর মাত্র তিন রানের ব্যবধানে খালি হাতে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এসময় বাংলাদেশের সহজ জয়ের মঞ্চে হটাৎ ইঙ্গিত দেয় রোমাঞ্চের।

শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। জোফরা আর্চারের করা ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে আফিফ হোসেন বোল্ড হলে জয়ের পথে বাঁধা তৈরি হয়। এই ওভার থেকে তিন রান এলে সমীকরণ দাঁড়ায় দুই ওভারে ১৩ রানের।

ক্রিস জর্ডানের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে সমীকরণ সহজ করেন শান্ত। পরের বলে আসে আরও দুই রান। পরের বলে সিঙ্গেল হলে স্ট্রাইকে যান তাসকিন। ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুই চার মেরে ঐতিহাসি সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে তিন চারে ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন শান্ত ও তাসকিনের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত তিন বলে আট রানের ইনিংস। 

এর আগে প্রথম ইনিংসে বোলিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভার করতে এসেই ১০ রান হজম করেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজের দারুণ এক ডেলিভারিতে ইংলিশ ওপেনার সল্টের ব্যাট স্পর্শ করে প্রথম স্লিপের পাশ দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। দারুণ বোলিং করার ফিজের এই ওভার থেকে আসে মাত্র ছয় রান।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। তাসকিনের বল উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ইংলিশ ওপেনার ডেভিড মালান। কিন্তু সেটা এজড হয়ে থার্ডম্যানে উড়ে গেলে তালুবন্দি করেন হাসান মাহমুদ। ফেরার আগে মাত্র পাঁচ রান করেন তিনি।

এক বলের ব্যবধানে তিন নম্বরে নামা মঈন আলিকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাসকিনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে মঈনের ব্যাট স্পর্শ করে প্রথম স্লিপে গেলেও লাফিয়ে সেটার নাগাল পাননি নাজমুল হোসেন শান্ত।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে মাত্র আট রান দেন তাসকিন। একটি চার হজম করলেও পুরো ওভারে মঈন ও সল্টকে রীতিমতো অস্বস্তিতে রেখেছিলেন তিনি।

তবে অন্যরা অস্বস্তিতে থাকলেও আরেক প্রান্তে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন সল্ট। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার করতে নাসুম আহমেদ হজম করেছেন ১৩ রান। পাওয়ার প্লে শেষে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ৫০ রান।

তবে পাওয়ার প্লে শেষে বল হাতে নিয়েই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সল্টকে ফিরিয়েছেন সাকিব। ফেরার আগে ১৯ বলে ২৫ রান করেছেন সল্ট। এরপর ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে সবচেয়ে বড় মাছটাই শিকার করেছেন হাসান মাহমুদ। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারের উইকেট উপড়ে ফেলেছেন এই ডানহাতি পেসার।

পরের ওভারে আবারও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতে টাইগাররা। এই ম্যাচে একাদশে ফেরা স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরান মঈন আলীকে। শামিম হোসেনের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে মঈনের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান করা ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে পরের চার ওভারে যোগ হয় মাত্র ১২ রান।

৫৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন ডাকেট ও কারেন। দুজনে মিলে ধীরে ধীরে চাপ সামাল দেওয়ার সাথে রানের চাকাও সচল রাখেন।

ইনিংসের ১৫তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মারতে চেয়েছিলেন কারেন, মিস করলে বিদ্যুৎ গতিতে স্টাম্পিং করে উল্লাসে মাতেন টাইগার উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস। দলীয় ৯১ রানে কারেন ফিরলে ভাঙে তাদের ৩৪ রানের প্রতিরোধ। কারেনের ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ১২ রান।

এক বলের ব্যবধানে ক্রিস ওকসকেও স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। ওকসও এগিয়ে এসে মারতে গেলে বল পায়ে লেগে পিছনে চলে যায়। প্রথম দফায় মিস করলেও দ্রুত সেটা ধরে উইকেট ভেঙে দেন লিটন।

ইনিংসের ১৭তম ওভারে বল হাতে নিয়ে আবারও উইকেট শিকারের উল্লাসে মাতেন মিরাজ। এবার তার শিকার ক্রিস জর্ডান। একাদশে ফেরার ম্যাচে চার ওভারে ১২ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন খুলনার এই ক্রিকেটার।

শেষদিকে সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন ডাকেট ও অভিষিক্ত রেহান আহমেদ। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে শান্তর দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফেরেন ডাকেট। ফেরার আগে ২৮ রান করেন তিনি। শেষ তিন বল দুই উইকেট হারানোর পর ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা।